ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্থানীয় সরকার ও উপজেলা নির্বাচন

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ০৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • ১৬ ভিউ

মনীষীরা বলে গেছেন, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশ এ বাণীটি আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বহু মন্ত্রী-এমপি তাদের স্বজনদের উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যন বানাতে চান। অথচ দলের হাইকমান্ড মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছে।

লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকরা বহু দিন আগে থেকে বলে আসছেন, একজন সংসদ-সদস্য মানে নিজ নিজ এলাকায় আলাদা আলাদা সরকার। কোনো কোনো সংসদ-সদস্য তিন-চারবার, এমনকি ছয়বার পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় কায়েম করেছেন এমপিতন্ত্র। তারা নিজ পুত্রকে পৌর মেয়র, ভ্রাতাকে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাগিনাকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়েই ক্ষান্ত হননি; নিজের পছন্দে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ সব লীগের কমিটি গঠন করেছেন। গোটা দেশে আওয়ামী লীগ এভাবেই চলমান রয়েছে। বলা যায়, ইতোমধ্যে এ নিয়মটি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়ে গেছে! এতে তরুণ কর্মীরা হতাশ হয়ে ‘গ্রুপিং’ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। জামায়াতের অংশ নেওয়ার আলামত দেখা গেলেও তারাও নাকি সরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক প্রত্যাহার করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের বাড়াবাড়ি দেখে কেন্দ্র শঙ্কিত হয়ে উপরিউক্ত নির্দেশনা দিয়েছে। সম্প্রতি নাটোরে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও মারধর করায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন এবং তার শ্যালককে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ-সদস্য বলেছেন, ‘যে এলাকা থেকে ভোট কম দিবেন, সে এলাকায় আমি কোনো উন্নয়ন হতে দেব না।’ উল্লেখ্য, তার নির্বাচনি এলাকার সুবর্ণচর উপজেলায় চেয়ারম্যানপ্রার্থী হয়েছেন তার পুত্র।

মজার বিষয় হলো, উপজেলা পরিষদ কী, উপজেলা প্রশাসন কী, উপজেলা পরিষদের কাজ কী ইত্যাদি না জেনেই তারা পদ দখলের লড়াই করছেন। তারা স্থানীয় সরকার নিয়ে ভাবছেন না। চেয়ারম্যান কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান হতে পারলে দলে নিজের অবস্থান মজবুত হবে এবং ভবিষ্যতে বড় পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন-একমাত্র এটাই তাদের লক্ষ্য। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ায় একপেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দীর্ঘকালের নির্দলীয় ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয়। উল্লেখ্য, দেশে একটিমাত্র সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় সব ক্ষমতার মালিক কেন্দ্রীয় সরকার। আবার কেন্দ্রীয় সরকার গণতান্ত্রিক নিয়মে পরিচালিত না হওয়ায় সব ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সরকার ইউনিটগুলোকে স্তর বিন্যাস করে প্রজাতান্ত্রিক রূপ দিতে হবে (যেমন : জেলা সরকার, নগর সরকার, উপজেলা সরকার, ইউনিয়ন সরকার ইত্যাদি)।

দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান সরকারের ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল পরিচালনার নীতির কারণে সব জায়গায় ব্যক্তিচর্চা বিদ্যমান। প্রতিটি উপজেলায় ৫/৬টি গ্রুপ। আওয়ামী লীগের অফিসে কিংবা দলীয় আড্ডায় তারা আওয়ামী লীগের আদর্শ নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলে না। দলের অধিকাংশ কর্মী কেবল স্লোগান দিতে জানে।

[ শফিকুল ইসলাম ইরান : গণমাধ্যমকর্মী ]

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

স্থানীয় সরকার ও উপজেলা নির্বাচন

আপডেট টাইম ০৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

মনীষীরা বলে গেছেন, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশ এ বাণীটি আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বহু মন্ত্রী-এমপি তাদের স্বজনদের উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যন বানাতে চান। অথচ দলের হাইকমান্ড মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছে।

লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকরা বহু দিন আগে থেকে বলে আসছেন, একজন সংসদ-সদস্য মানে নিজ নিজ এলাকায় আলাদা আলাদা সরকার। কোনো কোনো সংসদ-সদস্য তিন-চারবার, এমনকি ছয়বার পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় কায়েম করেছেন এমপিতন্ত্র। তারা নিজ পুত্রকে পৌর মেয়র, ভ্রাতাকে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাগিনাকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়েই ক্ষান্ত হননি; নিজের পছন্দে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ সব লীগের কমিটি গঠন করেছেন। গোটা দেশে আওয়ামী লীগ এভাবেই চলমান রয়েছে। বলা যায়, ইতোমধ্যে এ নিয়মটি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়ে গেছে! এতে তরুণ কর্মীরা হতাশ হয়ে ‘গ্রুপিং’ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। জামায়াতের অংশ নেওয়ার আলামত দেখা গেলেও তারাও নাকি সরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক প্রত্যাহার করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের বাড়াবাড়ি দেখে কেন্দ্র শঙ্কিত হয়ে উপরিউক্ত নির্দেশনা দিয়েছে। সম্প্রতি নাটোরে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও মারধর করায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন এবং তার শ্যালককে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ-সদস্য বলেছেন, ‘যে এলাকা থেকে ভোট কম দিবেন, সে এলাকায় আমি কোনো উন্নয়ন হতে দেব না।’ উল্লেখ্য, তার নির্বাচনি এলাকার সুবর্ণচর উপজেলায় চেয়ারম্যানপ্রার্থী হয়েছেন তার পুত্র।

মজার বিষয় হলো, উপজেলা পরিষদ কী, উপজেলা প্রশাসন কী, উপজেলা পরিষদের কাজ কী ইত্যাদি না জেনেই তারা পদ দখলের লড়াই করছেন। তারা স্থানীয় সরকার নিয়ে ভাবছেন না। চেয়ারম্যান কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান হতে পারলে দলে নিজের অবস্থান মজবুত হবে এবং ভবিষ্যতে বড় পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন-একমাত্র এটাই তাদের লক্ষ্য। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ায় একপেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দীর্ঘকালের নির্দলীয় ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয়। উল্লেখ্য, দেশে একটিমাত্র সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় সব ক্ষমতার মালিক কেন্দ্রীয় সরকার। আবার কেন্দ্রীয় সরকার গণতান্ত্রিক নিয়মে পরিচালিত না হওয়ায় সব ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সরকার ইউনিটগুলোকে স্তর বিন্যাস করে প্রজাতান্ত্রিক রূপ দিতে হবে (যেমন : জেলা সরকার, নগর সরকার, উপজেলা সরকার, ইউনিয়ন সরকার ইত্যাদি)।

দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান সরকারের ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল পরিচালনার নীতির কারণে সব জায়গায় ব্যক্তিচর্চা বিদ্যমান। প্রতিটি উপজেলায় ৫/৬টি গ্রুপ। আওয়ামী লীগের অফিসে কিংবা দলীয় আড্ডায় তারা আওয়ামী লীগের আদর্শ নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলে না। দলের অধিকাংশ কর্মী কেবল স্লোগান দিতে জানে।

[ শফিকুল ইসলাম ইরান : গণমাধ্যমকর্মী ]