স্বপন কুমার ঢালী
দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ( হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার থেকে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গাপূজার আজ শনিবার মহাসপ্তমী। ধূপ, পঞ্চপ্রদীপ, উলুধ্বনি আর ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে বাজছে শঙ্খনাদ। মণ্ডপে মণ্ডপে উচ্চারিত হচ্ছে পুরোহিতের চন্ডীপাঠে মন্ত্রধ্বনি। শনিবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা পূজা উদযাপন করছেন।
মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে পূজা হবে দেবীর। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা।
সপ্তমী পূজা উপলক্ষে নানা রঙের পোশাক পরে বিভিন্ন বয়সী মানুষ সকাল থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে হাজির হচ্ছেন। গত দুই বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পূজার আনন্দ অনেকটা ফিকে থাকলেও এবার কোনো ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই হচ্ছে পূজা উদযাপন।
সরকারি কোন বিধি নিষেধ না থাকায় জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেবীবন্দনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও মহাপ্রসাদ গ্রহণ শুরু হয়েছে।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আজ আসছেন। অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দিনপঞ্জিকানুসারে, এবছর দূর্গাদেবী ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী তিথিতে মর্ত্যে গোটকে (ঘোড়া) আসছে আর ২৪ অক্টোবর দশমী তিথিতে কৈলাশে চলে যাবেন গোটকে।
আগামীকাল ২২ অক্টোবর মহাষ্টমী, বিশেষ বিশেষ পূজা মন্ডপগুলোতে ‘কুমারি পূজা ‘ অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৪ অক্টোবর দশমী তিথি প্রতীমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় শারদীয় উৎসব দূর্গা পূজা। এ বছর বরগুনার বেতাগী উপজেলায় ৩৬ টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় ।
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এ বিশ্বাসে সব মিলিয়ে এবারের পূজাতেও কোনো কমতি থাকবে না বলে জানান আয়োজকরা ।
এদিকে পূজামণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো ধরনের কার্যক্রম হলে সংশ্লিষ্ট কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের। পূজা উদযাপন পরিষদ থেকেও মন্দিরগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ কঠোর নিরাপত্তায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
উপজেলার বেতাগী কেন্দ্রীয় সর্বজনীন কালী মন্দিরের দুর্গামন্ডপের সভাপতি তপন কর্মকার বলেন,’ আজ সকালে থেকে মহাসপ্তমী পূজা চলাকালে ঢাক, কাঁসর ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠে পূজামন্ডপ। ইতোমধ্যে পুজা মন্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় জমতে দেখা গেছে।’
বেতাগী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ধীমান কান্তি গুহ বলেন, আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনার পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিসহ মনোনয়নকৃত ভলান্টিয়ারদের সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন,’ প্রতিটি পূজামন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো ধরনের কার্যক্রম হলে সংশ্লিষ্ট কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আহমেদ বলেন,’ আইন শৃংখলায় নিয়োজিত পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী যথারীতি কাজ করছে । প্রতিটি পূজা মন্ডপে ঘুরে দেখা হচ্ছে এবং মোবাইল ফোন খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।