ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিলাম ছাড়াই সরকারি মালামাল বিক্রি: ভিডিও ভাইরাল

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ১১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৭ ভিউ

ব্যায়ামাগারের পুরাতন মালামাল প্রধান সহকারীর বাড়িতেই বিক্রি করা হচ্ছে।

বরগুনার বেতাগী পৌরশহরের ওয়াপদা রোডের একটি বসত বাড়ির মধ্যে বসে বিক্রি হচ্ছে শতশত কেজি রড, পাশের বাগানের মধ্যে কয়েকহাজার সিএফটি (খোয়া)ইটের সুরকি। সোমবার সকালের দিকে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্র্ডের অবস্থিত ওই বসত বাড়িটি বেতাগী পৌরসভায় কর্মরত প্রধান সহকারী মো. তুহিন সিকদারের। মালামাল গুলি তারই, তিনিই বিক্রি করেছেন। বিক্রিমূল্য কম এবং ওইসব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহৃত ছিলো এমনটা মনে হওয়ায় তথ্য নিলে বেড়িয়ে আসে রহস্য। মালামালগুলি সরকারি(পৌরসভার) এবং কোনো নিলাম ছাড়াই আত্মসাত করেছেন তুহিন সিকদার। এমনটাই জানিয়েছেন বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক। তবে তুহিনের দাবী নিরাপত্তা ঝঁুকির কথা ভেবে ইউএনও স্যারকে জানিয়েই মালামালগুলি রেখেছেন। এদিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরগুনা জেলা প্রশাসক।


খোঁজ নিলে জানা যায়, বেতাগী ইউএনও‘র নির্মাণাধীন বাংলুর সামনে পৌরসভার আর একটি নির্মাণাধীন ব্যামাগার ভবনের কাজ চলছিলো। কিন্তু ওই ভবনটি অপরিকল্পিত হওয়ায় নির্মাণকাজ বন্ধ করে ভাঙার নির্দেশ দেন বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক। উপজেলা পরিষদের বাউন্ডারির মধ্যে পড়ায় ভাঙার জন্য নোটিশ দিয়েছিল উপজেলা পরিষদ। পরে গত সপ্তাহে পৌরসভা কতৃর্পক্ষ ভবনটি ভাঙলেও, মালামাল নিয়ে যায় তুহিন সিকদার। কিন্তু ভবনের পুরাতন মালামাল রড, ইটের সুরকি (খোয়া) এসব নিলামের মাধ্যমে বিক্রির কথা থাকলেও এমন কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন পৌরসভার একটি সূত্র। রাতের আঁধারে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান এসব মালামাল। মালামাল পরিবহন করা গাড়িচালকরা জানিয়েছেন ১৯ গাড়ি সুরকি ও ৪ গাড়ি রড নেয়া হয়েছে ওই বাড়িতে, তাতে প্রায় ১টন রড ও ৩হাজার সিএফটি খোয়া হওয়ার কথা। তাতে কম হলেও ৫লাখ টাকার তো হবেই, তবে তারা জানতেন এসব তুহিন ক্রয় করেছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, সরকারি রড দুইজন লোক রড ওজন দিচ্ছেন। এদের মধ্যে একজন সবুজ তিনি বলেন, রড গুলি বেশি পুরাতন নয় আবার ব্যবহার করা যাবে তাই ৭০ টাকা ধরে বিক্রি করা হয়েছে। ৩—৪‘শ কেজি রডের কম হবে না। ইটের খোয়া প্রতি সিএফটি ১১০ টাকা করে দাম ধরা হয়েছে। তারা আরও বলেন পৌরসভার প্রধান সহকারী তুহিন সিকদারের সাথে যোগাযোগ করলে আরও অনেক কিছু কেনা যাবে। মালামালগুলি সরকারি তারা জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, তুহিন ভাই আমাগো এখানে রাখতে বলছে রাখছি এবং আজ বিক্রি করতে বলছে তাই মাপতেছি। বাকিটা তিনিই(তুহিন) ভালো জানেন।


এবিষয়ে কথা হয় তুহিন সিকদারের সাথে, প্রথমে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদককে অর্থ প্রলোভন দেখায়, পরে জানান ভিডিও করছে কে যেনো তাই মালামাল এনে পৌরসভার গ্রেজে রেখেছি। খোয়া রাখার জায়গা না থাকায় আমার বাড়ির পাশে বাগানে রাখছিলাম। পৌরসভা থাকতেও কেন তিনি তার বাসায় নিয়ে গেলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিরাপত্তার ঝুকির কারনে নিয়ে গিয়েছিলাম। পৌরসভার পাশে খোয়া রাখার জায়গা না থাকায় ওখানে রাখছি। আপনারা এটা নিয়ে পড়ে আছেন! এটার দড়জা,কেসিগেট ও লোহার গিরিলগুলি কারা নিলো তাও খুঁজে বের করুন। আমি যা করছি ইউএনও স্যারকে জানিয়েই করেছি।


বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. বশির গাজী জানান,‘ বিষয়টি আমি শুনেছি, বেতাগীর বাহিরে থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে প্রধান সহকারী তুহিনকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ প্রদানসহ জেলা প্রশাসকের কাছে বরখাস্ত করণে সুপারিশ করবো। এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন,‘আমি বিষয়টি জেনে বেতাগীর পৌর প্রশাসককে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

নিলাম ছাড়াই সরকারি মালামাল বিক্রি: ভিডিও ভাইরাল

আপডেট টাইম ১১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

বরগুনার বেতাগী পৌরশহরের ওয়াপদা রোডের একটি বসত বাড়ির মধ্যে বসে বিক্রি হচ্ছে শতশত কেজি রড, পাশের বাগানের মধ্যে কয়েকহাজার সিএফটি (খোয়া)ইটের সুরকি। সোমবার সকালের দিকে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্র্ডের অবস্থিত ওই বসত বাড়িটি বেতাগী পৌরসভায় কর্মরত প্রধান সহকারী মো. তুহিন সিকদারের। মালামাল গুলি তারই, তিনিই বিক্রি করেছেন। বিক্রিমূল্য কম এবং ওইসব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহৃত ছিলো এমনটা মনে হওয়ায় তথ্য নিলে বেড়িয়ে আসে রহস্য। মালামালগুলি সরকারি(পৌরসভার) এবং কোনো নিলাম ছাড়াই আত্মসাত করেছেন তুহিন সিকদার। এমনটাই জানিয়েছেন বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক। তবে তুহিনের দাবী নিরাপত্তা ঝঁুকির কথা ভেবে ইউএনও স্যারকে জানিয়েই মালামালগুলি রেখেছেন। এদিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরগুনা জেলা প্রশাসক।


খোঁজ নিলে জানা যায়, বেতাগী ইউএনও‘র নির্মাণাধীন বাংলুর সামনে পৌরসভার আর একটি নির্মাণাধীন ব্যামাগার ভবনের কাজ চলছিলো। কিন্তু ওই ভবনটি অপরিকল্পিত হওয়ায় নির্মাণকাজ বন্ধ করে ভাঙার নির্দেশ দেন বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক। উপজেলা পরিষদের বাউন্ডারির মধ্যে পড়ায় ভাঙার জন্য নোটিশ দিয়েছিল উপজেলা পরিষদ। পরে গত সপ্তাহে পৌরসভা কতৃর্পক্ষ ভবনটি ভাঙলেও, মালামাল নিয়ে যায় তুহিন সিকদার। কিন্তু ভবনের পুরাতন মালামাল রড, ইটের সুরকি (খোয়া) এসব নিলামের মাধ্যমে বিক্রির কথা থাকলেও এমন কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন পৌরসভার একটি সূত্র। রাতের আঁধারে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান এসব মালামাল। মালামাল পরিবহন করা গাড়িচালকরা জানিয়েছেন ১৯ গাড়ি সুরকি ও ৪ গাড়ি রড নেয়া হয়েছে ওই বাড়িতে, তাতে প্রায় ১টন রড ও ৩হাজার সিএফটি খোয়া হওয়ার কথা। তাতে কম হলেও ৫লাখ টাকার তো হবেই, তবে তারা জানতেন এসব তুহিন ক্রয় করেছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, সরকারি রড দুইজন লোক রড ওজন দিচ্ছেন। এদের মধ্যে একজন সবুজ তিনি বলেন, রড গুলি বেশি পুরাতন নয় আবার ব্যবহার করা যাবে তাই ৭০ টাকা ধরে বিক্রি করা হয়েছে। ৩—৪‘শ কেজি রডের কম হবে না। ইটের খোয়া প্রতি সিএফটি ১১০ টাকা করে দাম ধরা হয়েছে। তারা আরও বলেন পৌরসভার প্রধান সহকারী তুহিন সিকদারের সাথে যোগাযোগ করলে আরও অনেক কিছু কেনা যাবে। মালামালগুলি সরকারি তারা জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, তুহিন ভাই আমাগো এখানে রাখতে বলছে রাখছি এবং আজ বিক্রি করতে বলছে তাই মাপতেছি। বাকিটা তিনিই(তুহিন) ভালো জানেন।


এবিষয়ে কথা হয় তুহিন সিকদারের সাথে, প্রথমে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদককে অর্থ প্রলোভন দেখায়, পরে জানান ভিডিও করছে কে যেনো তাই মালামাল এনে পৌরসভার গ্রেজে রেখেছি। খোয়া রাখার জায়গা না থাকায় আমার বাড়ির পাশে বাগানে রাখছিলাম। পৌরসভা থাকতেও কেন তিনি তার বাসায় নিয়ে গেলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিরাপত্তার ঝুকির কারনে নিয়ে গিয়েছিলাম। পৌরসভার পাশে খোয়া রাখার জায়গা না থাকায় ওখানে রাখছি। আপনারা এটা নিয়ে পড়ে আছেন! এটার দড়জা,কেসিগেট ও লোহার গিরিলগুলি কারা নিলো তাও খুঁজে বের করুন। আমি যা করছি ইউএনও স্যারকে জানিয়েই করেছি।


বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. বশির গাজী জানান,‘ বিষয়টি আমি শুনেছি, বেতাগীর বাহিরে থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে প্রধান সহকারী তুহিনকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ প্রদানসহ জেলা প্রশাসকের কাছে বরখাস্ত করণে সুপারিশ করবো। এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন,‘আমি বিষয়টি জেনে বেতাগীর পৌর প্রশাসককে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।