ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেতাগীতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ঘুস গ্রহণ: ভিডিও ভাইরাল

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ১১:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩
  • ৭ ভিউ


বিশেষ প্রতিনিধিঃ


বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফাহমিদা লস্করের বিরুদ্ধে ঘুস বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই ঘুস বানিজ্যের (৬মিনিটি ৪৪ সেকেন্ডের) একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে ঘুসের টাকা গননা করতে দেখা যায় ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত (ফার্মাসিষ্ট) কৃষ্ণ কুমার পালকে। তিনি(কৃষ্ণ) ঘুস লেনদেনের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করলেও এমন কোনো বিষয় ঘটেনি বলে দাবী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। এদিকে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগের ঊর্ধতন কতৃর্পক্ষ।
ভিডিও থেকে জানা যায়,‘ পথ্য ও ষ্টেশনারি সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারি (প্রতিনিধি) মো. রেজাউল ইসলাম মামুন খান বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে ঢোকেন। পরে তাদের দুইজনের মধ্যে কথপকথন হয়। এক পর্যায়ে বেতাগী হাসপাতালে কর্মরত (ফামার্সিষ্ট) কৃষ্ণ কুমার পালকে তার অফিসে ডেকে মামুন খানের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিলটি গুনে তার কাছে রাখতে নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে কৃষ্ণ তার অফিস কক্ষে গিয়ে টাকাভর্তি খামটি খোলেন এবং টাকা গননা করে রেখে দেন।

কথপকথনে দেখা ও শোনা যায়— স্বাস্থ্য কর্মকতা— জি¦ মামুন সাহেব বলেন, বিল কি উঠিয়েছেন কবে ? মামুন খান— জ্বি বিল উঠিয়েছি বুধবার। স্বাস্থ্য কর্মকতা— রিয়াজ মোল্লা কই? সে আমার ঠিকাদার ,আপনি তো আমার প্রধান ঠিকাদার না। মামুন খান— স্যার রিয়াজ মোল্লার মা অসুস্থ, আপনি তো জানেন আমারা সেয়ারে আছি, তাছাড়া সব কথাবার্তা তো আমিই বলি আপনি আসার পর থেকে। গত বৃহস্পতিবার আপনাকে ফোন দিয়েছি কিন্তু আপনি রিসিভ করেননি। স্বাস্থ্য কর্মকতা— ফোন রিসিভ করিনি মানে? আমি সবসময়ই ব্যস্ত থাকি। মামুন খান— আমরাও তো ব্যস্ত থাকি, ঠিকাদারি করি, জুন মাসে আমাদেরও তো অন্যান্য চাপ থাকে। তাছাড়া আপনি তো সেদিন বললেন ২১ তারিখ দেখা করতে, তাই আমি এখন এসেছি। ওইটা নিয়ে আসছি স্যার। স্বাস্থ্য কর্মকতা— সেটা আপনার আগে যানানো উচিত ছিলো, আমার সাথে কথা বলা উচিত ছিলো। মামুন খান— আপনার সাথে তো এসব বিষয়ে মোবাইলে আমি কথা বলতে পারিনা। স্বাস্থ্য কর্মকতা— মোবাইলে কেনো বলবেন? আমাকে ইনফর্ম করতেন! যে স্যার আমি বিল পেয়েছি। মামুন খান— বিল পেয়েই আপনাকে ফোন দিয়েছি, ফোন ধরেননি দেখে আজ অফিসে আসলাম। এরপরই খামে প্যাকেট করা টাকার বান্ডিল বের করেন মামুন খান। বলেন স্যার শুধু একটু মিসআন্ডারষ্ট্যান্ডিং হয়েছে আর কিছুই না, আপনি রাগ কইরেন না। স্বাস্থ্য কর্মকতা— আমার কত আসে? মামুন খান— আপনার আসে ৫৩ স্যার, স্বাস্থ্য কর্মকতা—আমার আসছে? মামুন খান— জি¦ স্যার। স্বাস্থ্য কর্মকতা— টোটাল আসে কত? মামুন খান— স্যার তাতো আমি হিসেব করিনি, তবে জাকির সাহেব বলেছেন(হিসাব রক্ষক) স্যারকে (আপনাকে) এটা দিবেন। স্যার তাতে এই ছয়মাসে আমাদের সব খরচ গিয়ে দুজনে মোট পেয়েছি আঠেরো হাজার টাকা। তারপরও বিল পেয়েই আপনাকে নক করেছি। এরপর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফোন দেন প্রধান ঠিকাদার রিয়াজ মোল্লাকে এবং বলেন মামুন সাহেব তো এসছেন ,আমার কত ছিলো যেনো ওহ! তারপর কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে ফোন রাখেন। কিছুক্ষণ পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা( ফাহমিদা লস্কর) কৃষ্ণ কুমার পালকে (ফার্মাসিষ্ট) ডাকেন, এবং বলেন মামুন সাহেবের কাছ থেকে ওইটা গুনে আপনার কাছে রখে দেন। সর্বশেষ মামুন বলেন— স্যার কৃষ্ণ দাদাকে একটু বলে দেন, ক্লিনারের বিলটার ব্যাপারে! কালকে তো ফান্ড ক্লোজ হবে। স্বাস্থ্য কর্মকতা— আরে ভাই কালকে কোনো? আজকেই হয়ে যাবে, আমি আজ সারাদিন অফিসে কাজ করবো। পরে ভিডিওতে দেখা যায় কৃষ্ণ কুমার পাল খামটি নিয়ে তার কক্ষে যান এবং টাকা ভর্তি খামটি খুলে ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল গননা করতে করতে বলেন আপনার(মামুন খান) ক্লিনারের বিল আজই হয়ে যাবে চিন্তা কইরেন না।

হাসপাতালে খাবার (পথ্য ও ষ্টেশনারি) সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারি(প্রতিনিধি) মো. রেজাউল ইসলাম মামুন খান বলেন,‘ বিগত তিন বছর যাবৎ বেতাগী হাসপাতালে পথ্য ও ষ্টেশনারি সরবরাহ করে আসছি। বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা(ডা: ফাহমিদা লস্কর) বিল নিয়ে আমাকে প্রায়ই হয়রানি করেন, মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করেন। বিগত ছয়মাস আমার বিলের কাগজে স্বাক্ষর দেননি। বিল তুলতে না পেরে বাধ্য হয়ে তার প্রস্তাব মেনে নেই। পরে বিল উত্তোলন করে তাকে বিলের পার্সেন্টিজ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেই। আবার এই তিনমাস হলো আমার কোনো বিলে স্বাক্ষর করেন না তিনি। গত ২৪ আগষ্ট তার কাছে বিলের আবেদন করলে আবার টাকা দাবী করেন এবং আমি অপরগতা জানালে আমার ওপর রেগে গিয়ে যা তা ব্যবহার করেন। এবং বলেন বিল কিভাবে নেন তা দেখবো। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেনদেনের বিষয়টি সত্য আমি বাধ্য হয়ে তাকে ওই টাকা দিয়েছি।

বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত (ফার্মাসিষ্ট) কৃষ্ণ কুমার পাল সত্যতা স্বীকার করে বলেন,‘ যেদিন ঘটনাটি ঘটে ওইদিন আমি অফিসে কাজ করছিলাম, তখন স্যার (ফাহমিদা লস্কর) আমাকে তার অফিস কক্ষে ডাকেন এবং মামুন সাহেবের কাছ থেকে টাকা গুলো গুনে রাখতে বলেন এবং আমি গুনে রাখি। মামুন সাহেব যাওয়ার পর, স্যার পরে ওই টাকা আমার কাছ নিয়ে গেছেন। যেখানে ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিলে মোট ৫০ হাজার টাকা ছিলো। ওই টাকা কোনো জরিমানা কিংবা হাসপাতালের কোনো ফান্ডের কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি(কৃষ্ণ) আরো বলেন, ওই টাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে মামুন সাহেব দিয়েছেন, যা আমি তারই(ফাহমিদা লস্কর) নির্দেশে গ্রহণ করেছি। ওই টাকা অন্য কোনো ফান্ডের না।
ঘুস লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা: ফাহমিদা লস্কর বলেন,‘ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা মানসম্মত খাবার পরিবেশন করেন না। আমি এ নিয়ে আরো তাদেরকে ডেকে মিটিং করে হুসিয়ারি দিয়েছি। আমি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ছেছরামি করে টাকা নিবো না। আমি পরিস্ককার, আমি ক্লিন। আর টাকা নিয়ে থাকলেও সেটি জরিমানা হতে পারে। জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা বাবাদ কোনো রিসিট দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদৌ মামুন সাহেব টাকা দিয়েছে কিনা আমি তো সেটাই জানিনা। তাছাড়া আমাকে তো ভিডিওতে টাকা গুনতে দেখা যাচ্ছেনা। কৃষ্ণ টাকা গুনছে নাকি! সেটা তো আমাদের অফিসের টাকাও হতে পারে।

বরগুনা সিভিল সার্জন ডা: মো মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন,‘ হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ঘুস গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে, সঠিকভাবে তদন্তমূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ডা: শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন,‘ এ ধরণের অর্থ বানিজ্যের কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো কর্মকর্তা করে থাকে বা এর সাথে জড়িত থাকে তবে সঠিকভাবে তদন্ত করে, বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

বেতাগীতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ঘুস গ্রহণ: ভিডিও ভাইরাল

আপডেট টাইম ১১:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩


বিশেষ প্রতিনিধিঃ


বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফাহমিদা লস্করের বিরুদ্ধে ঘুস বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই ঘুস বানিজ্যের (৬মিনিটি ৪৪ সেকেন্ডের) একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে ঘুসের টাকা গননা করতে দেখা যায় ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত (ফার্মাসিষ্ট) কৃষ্ণ কুমার পালকে। তিনি(কৃষ্ণ) ঘুস লেনদেনের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করলেও এমন কোনো বিষয় ঘটেনি বলে দাবী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। এদিকে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগের ঊর্ধতন কতৃর্পক্ষ।
ভিডিও থেকে জানা যায়,‘ পথ্য ও ষ্টেশনারি সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারি (প্রতিনিধি) মো. রেজাউল ইসলাম মামুন খান বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে ঢোকেন। পরে তাদের দুইজনের মধ্যে কথপকথন হয়। এক পর্যায়ে বেতাগী হাসপাতালে কর্মরত (ফামার্সিষ্ট) কৃষ্ণ কুমার পালকে তার অফিসে ডেকে মামুন খানের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিলটি গুনে তার কাছে রাখতে নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে কৃষ্ণ তার অফিস কক্ষে গিয়ে টাকাভর্তি খামটি খোলেন এবং টাকা গননা করে রেখে দেন।

কথপকথনে দেখা ও শোনা যায়— স্বাস্থ্য কর্মকতা— জি¦ মামুন সাহেব বলেন, বিল কি উঠিয়েছেন কবে ? মামুন খান— জ্বি বিল উঠিয়েছি বুধবার। স্বাস্থ্য কর্মকতা— রিয়াজ মোল্লা কই? সে আমার ঠিকাদার ,আপনি তো আমার প্রধান ঠিকাদার না। মামুন খান— স্যার রিয়াজ মোল্লার মা অসুস্থ, আপনি তো জানেন আমারা সেয়ারে আছি, তাছাড়া সব কথাবার্তা তো আমিই বলি আপনি আসার পর থেকে। গত বৃহস্পতিবার আপনাকে ফোন দিয়েছি কিন্তু আপনি রিসিভ করেননি। স্বাস্থ্য কর্মকতা— ফোন রিসিভ করিনি মানে? আমি সবসময়ই ব্যস্ত থাকি। মামুন খান— আমরাও তো ব্যস্ত থাকি, ঠিকাদারি করি, জুন মাসে আমাদেরও তো অন্যান্য চাপ থাকে। তাছাড়া আপনি তো সেদিন বললেন ২১ তারিখ দেখা করতে, তাই আমি এখন এসেছি। ওইটা নিয়ে আসছি স্যার। স্বাস্থ্য কর্মকতা— সেটা আপনার আগে যানানো উচিত ছিলো, আমার সাথে কথা বলা উচিত ছিলো। মামুন খান— আপনার সাথে তো এসব বিষয়ে মোবাইলে আমি কথা বলতে পারিনা। স্বাস্থ্য কর্মকতা— মোবাইলে কেনো বলবেন? আমাকে ইনফর্ম করতেন! যে স্যার আমি বিল পেয়েছি। মামুন খান— বিল পেয়েই আপনাকে ফোন দিয়েছি, ফোন ধরেননি দেখে আজ অফিসে আসলাম। এরপরই খামে প্যাকেট করা টাকার বান্ডিল বের করেন মামুন খান। বলেন স্যার শুধু একটু মিসআন্ডারষ্ট্যান্ডিং হয়েছে আর কিছুই না, আপনি রাগ কইরেন না। স্বাস্থ্য কর্মকতা— আমার কত আসে? মামুন খান— আপনার আসে ৫৩ স্যার, স্বাস্থ্য কর্মকতা—আমার আসছে? মামুন খান— জি¦ স্যার। স্বাস্থ্য কর্মকতা— টোটাল আসে কত? মামুন খান— স্যার তাতো আমি হিসেব করিনি, তবে জাকির সাহেব বলেছেন(হিসাব রক্ষক) স্যারকে (আপনাকে) এটা দিবেন। স্যার তাতে এই ছয়মাসে আমাদের সব খরচ গিয়ে দুজনে মোট পেয়েছি আঠেরো হাজার টাকা। তারপরও বিল পেয়েই আপনাকে নক করেছি। এরপর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফোন দেন প্রধান ঠিকাদার রিয়াজ মোল্লাকে এবং বলেন মামুন সাহেব তো এসছেন ,আমার কত ছিলো যেনো ওহ! তারপর কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে ফোন রাখেন। কিছুক্ষণ পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা( ফাহমিদা লস্কর) কৃষ্ণ কুমার পালকে (ফার্মাসিষ্ট) ডাকেন, এবং বলেন মামুন সাহেবের কাছ থেকে ওইটা গুনে আপনার কাছে রখে দেন। সর্বশেষ মামুন বলেন— স্যার কৃষ্ণ দাদাকে একটু বলে দেন, ক্লিনারের বিলটার ব্যাপারে! কালকে তো ফান্ড ক্লোজ হবে। স্বাস্থ্য কর্মকতা— আরে ভাই কালকে কোনো? আজকেই হয়ে যাবে, আমি আজ সারাদিন অফিসে কাজ করবো। পরে ভিডিওতে দেখা যায় কৃষ্ণ কুমার পাল খামটি নিয়ে তার কক্ষে যান এবং টাকা ভর্তি খামটি খুলে ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল গননা করতে করতে বলেন আপনার(মামুন খান) ক্লিনারের বিল আজই হয়ে যাবে চিন্তা কইরেন না।

হাসপাতালে খাবার (পথ্য ও ষ্টেশনারি) সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারি(প্রতিনিধি) মো. রেজাউল ইসলাম মামুন খান বলেন,‘ বিগত তিন বছর যাবৎ বেতাগী হাসপাতালে পথ্য ও ষ্টেশনারি সরবরাহ করে আসছি। বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা(ডা: ফাহমিদা লস্কর) বিল নিয়ে আমাকে প্রায়ই হয়রানি করেন, মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করেন। বিগত ছয়মাস আমার বিলের কাগজে স্বাক্ষর দেননি। বিল তুলতে না পেরে বাধ্য হয়ে তার প্রস্তাব মেনে নেই। পরে বিল উত্তোলন করে তাকে বিলের পার্সেন্টিজ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেই। আবার এই তিনমাস হলো আমার কোনো বিলে স্বাক্ষর করেন না তিনি। গত ২৪ আগষ্ট তার কাছে বিলের আবেদন করলে আবার টাকা দাবী করেন এবং আমি অপরগতা জানালে আমার ওপর রেগে গিয়ে যা তা ব্যবহার করেন। এবং বলেন বিল কিভাবে নেন তা দেখবো। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেনদেনের বিষয়টি সত্য আমি বাধ্য হয়ে তাকে ওই টাকা দিয়েছি।

বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত (ফার্মাসিষ্ট) কৃষ্ণ কুমার পাল সত্যতা স্বীকার করে বলেন,‘ যেদিন ঘটনাটি ঘটে ওইদিন আমি অফিসে কাজ করছিলাম, তখন স্যার (ফাহমিদা লস্কর) আমাকে তার অফিস কক্ষে ডাকেন এবং মামুন সাহেবের কাছ থেকে টাকা গুলো গুনে রাখতে বলেন এবং আমি গুনে রাখি। মামুন সাহেব যাওয়ার পর, স্যার পরে ওই টাকা আমার কাছ নিয়ে গেছেন। যেখানে ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিলে মোট ৫০ হাজার টাকা ছিলো। ওই টাকা কোনো জরিমানা কিংবা হাসপাতালের কোনো ফান্ডের কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি(কৃষ্ণ) আরো বলেন, ওই টাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে মামুন সাহেব দিয়েছেন, যা আমি তারই(ফাহমিদা লস্কর) নির্দেশে গ্রহণ করেছি। ওই টাকা অন্য কোনো ফান্ডের না।
ঘুস লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা: ফাহমিদা লস্কর বলেন,‘ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা মানসম্মত খাবার পরিবেশন করেন না। আমি এ নিয়ে আরো তাদেরকে ডেকে মিটিং করে হুসিয়ারি দিয়েছি। আমি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ছেছরামি করে টাকা নিবো না। আমি পরিস্ককার, আমি ক্লিন। আর টাকা নিয়ে থাকলেও সেটি জরিমানা হতে পারে। জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা বাবাদ কোনো রিসিট দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদৌ মামুন সাহেব টাকা দিয়েছে কিনা আমি তো সেটাই জানিনা। তাছাড়া আমাকে তো ভিডিওতে টাকা গুনতে দেখা যাচ্ছেনা। কৃষ্ণ টাকা গুনছে নাকি! সেটা তো আমাদের অফিসের টাকাও হতে পারে।

বরগুনা সিভিল সার্জন ডা: মো মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন,‘ হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ঘুস গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে, সঠিকভাবে তদন্তমূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ডা: শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন,‘ এ ধরণের অর্থ বানিজ্যের কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো কর্মকর্তা করে থাকে বা এর সাথে জড়িত থাকে তবে সঠিকভাবে তদন্ত করে, বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।