ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউপি সদস্যের ভাইয়ের দোকানে বস্তাভর্তি সরকারি সার ও বীজ

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪
  • ১৫ ভিউ

বেতাগী প্রতিনিধি:

বিনামূল্যে কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সার ও বীজ ‘বিক্রির জন্য’ ভাইয়ের মুদি—মনোহরি দোকানে পাঠান এক ইউপি সদস্য। দোকানের একাংশে বস্তায় বস্তায় সাজিয়ে রাখা ছিলো ওইসব সরকারি সার ও বীজের বস্তা, যা নজরে আসে স্থানীয়দের।পরে প্রশাসনের অভিযানে ভ্রাম্যমান আদালতে ওই ইউপি সদস্যের ভাইকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, এক পর্যায়ে জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আটকও করা হয় তাকে। পরে স্থানীয়দের সুপারিশে ছেড়ে দিলেও গুনতে হয় পুরো জরিমানার টাকা। একইসাথে অভিযান থেকে প্রাপ্ত ওই সকল সার(৫০০ কেজি) ও বীজ(২৫০ কেজি) জব্দ করেন প্রশাসন। ১১ জুলাই রাত ১০টায় উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নেরর জলশাবাজারে এমন ঘটনাটি ঘটান সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুদ আলম মৃধা। তবে ওই ইউপি সদস্যের দাবী সুবিধাভোগী প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধায় কৃষি অফিস থেকে এসব সরকারি প্রণোদনা আমি নিজে এলাকায় নিয়ে আসি। আমার ভাইও একজন সার ব্যবসায়ী, তবে ভাইয়ের দোকানে বিক্রির জন্য সরকারি সার রাখিনি।


জানা যায়, আমন মৌশুমে কৃষি প্রণোদনা ও পূর্ণবাসন কর্মসূচীর আওতায় বরগুনার বেতাগী উপজেলাব্যাপী কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার, বীজ ও নারিকেল চারা বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে হোসনাবাদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে ৪০ জন প্রন্তিক কৃষকের নামে ডিএপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি এবং কেজি বীজ বরাদ্দ দেয় বেতাগী উপজেলা কৃষি অফিস। কিন্তু অভিযোগ ওয়ে ওই সব কৃষিপণ্য সুবিধাভোগীদের বিতরণ না করেই সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মাসুদ আলম তার ভাইেয়ের মুদি দোকানে বিক্রির জন্য রাখে। স্থানীয় সংবাদে প্রশাসন এসে সত্যতা পেলে সার ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা—৬ ও মুদি দোকানে কীটনাশক, ঔষধসহ অবৈধ আরো তিন প্রকারের পণ্য পাওয়ায় ভোক্তা অধিকার আইনের ধারা—৯ অনুযায়ী ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতটি পরিচালনা করেন বেতাগী সহকারী কমিশনা ভূমি বিপুল সিকদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ।


স্থানীয়রা জানান, যাদের নামে কৃষিপণ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা অনেকেই প্রান্তি কৃষক না। তাছাড়া ইউপি সদস্যের আপন ভাই স্বজন সহ বিত্তবানদের নামেই তালিকা তৈরী করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানায়, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন অফিসার মো. হারুন আর রশিদ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রান্তিক কৃষকের বদলে ভুয়া তালিকা তৈরী করে কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদের মাধ্যমে অনুমোদন করান। কৃষি অফিসের সবথেকে বড় সিন্ডিকেট হারুন আর রশিদ। ঠিক একারও মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে এবং কৃষকদের উপস্থিতি ছাড়াই যে কারো হাতে তুলে দেয় প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকার কৃষিপণ্য, বিপরীতে গ্রহণ করেন লাখ লাখ টাকা উৎকোচ। যার ভাগ পান কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ সহ অনেকেই। সূত্রটি আরো জানান,‘ এবারের আমন মৌশুমে কৃষি প্রণোদনার ক্ষেত্রে কোনো মাষ্টার রোল কিংবা তালিকার যাচাই বাছাই হয়নি। কৃষকের উপস্থিতি ছাড়াই তাদের স্বাক্ষর ও টিপসই জাল করে, যাকে খুশি তাকেই অর্থের বিনিময়ে বিতরণ করেছেন কৃষিপণ্য। আর এসব কাজে হারুনকে সহায়তা করেন উপজেলার বিভিন্ন ইউপির বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য। তবে এ ঘটনায় কোনো ধরণের বক্তব্য পাওয়া যায়নি ওই ইউপি সদস্য মাসুদ আলমের।

তবে এ বিষয়ে বেতাগী কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন,‘ এমন ঘটনা সত্যিই দূঃজনক। এ ঘটনায় ঊর্ধতন কতৃর্পক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে এবং তদন্ত করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেতাগী সহকারী কমিশনা (ভূমি) বিপুল সিকদার বলেন, সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সরকারি কৃষিপণ্য বিতরণ না করে, দোকানে রেখে বিক্রির সত্যতা পাওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমান করা হয়েছে। পরবর্তিতে একই কার্যক্রম পরিচালনা করলে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করার বিষয়ে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ সরকারি সার দোকানে বিক্রির অভিযোগ আসছিলো,আজকে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়েও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

ইউপি সদস্যের ভাইয়ের দোকানে বস্তাভর্তি সরকারি সার ও বীজ

আপডেট টাইম ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

বেতাগী প্রতিনিধি:

বিনামূল্যে কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সার ও বীজ ‘বিক্রির জন্য’ ভাইয়ের মুদি—মনোহরি দোকানে পাঠান এক ইউপি সদস্য। দোকানের একাংশে বস্তায় বস্তায় সাজিয়ে রাখা ছিলো ওইসব সরকারি সার ও বীজের বস্তা, যা নজরে আসে স্থানীয়দের।পরে প্রশাসনের অভিযানে ভ্রাম্যমান আদালতে ওই ইউপি সদস্যের ভাইকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, এক পর্যায়ে জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আটকও করা হয় তাকে। পরে স্থানীয়দের সুপারিশে ছেড়ে দিলেও গুনতে হয় পুরো জরিমানার টাকা। একইসাথে অভিযান থেকে প্রাপ্ত ওই সকল সার(৫০০ কেজি) ও বীজ(২৫০ কেজি) জব্দ করেন প্রশাসন। ১১ জুলাই রাত ১০টায় উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নেরর জলশাবাজারে এমন ঘটনাটি ঘটান সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুদ আলম মৃধা। তবে ওই ইউপি সদস্যের দাবী সুবিধাভোগী প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধায় কৃষি অফিস থেকে এসব সরকারি প্রণোদনা আমি নিজে এলাকায় নিয়ে আসি। আমার ভাইও একজন সার ব্যবসায়ী, তবে ভাইয়ের দোকানে বিক্রির জন্য সরকারি সার রাখিনি।


জানা যায়, আমন মৌশুমে কৃষি প্রণোদনা ও পূর্ণবাসন কর্মসূচীর আওতায় বরগুনার বেতাগী উপজেলাব্যাপী কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার, বীজ ও নারিকেল চারা বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে হোসনাবাদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে ৪০ জন প্রন্তিক কৃষকের নামে ডিএপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি এবং কেজি বীজ বরাদ্দ দেয় বেতাগী উপজেলা কৃষি অফিস। কিন্তু অভিযোগ ওয়ে ওই সব কৃষিপণ্য সুবিধাভোগীদের বিতরণ না করেই সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মাসুদ আলম তার ভাইেয়ের মুদি দোকানে বিক্রির জন্য রাখে। স্থানীয় সংবাদে প্রশাসন এসে সত্যতা পেলে সার ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা—৬ ও মুদি দোকানে কীটনাশক, ঔষধসহ অবৈধ আরো তিন প্রকারের পণ্য পাওয়ায় ভোক্তা অধিকার আইনের ধারা—৯ অনুযায়ী ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতটি পরিচালনা করেন বেতাগী সহকারী কমিশনা ভূমি বিপুল সিকদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ।


স্থানীয়রা জানান, যাদের নামে কৃষিপণ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা অনেকেই প্রান্তি কৃষক না। তাছাড়া ইউপি সদস্যের আপন ভাই স্বজন সহ বিত্তবানদের নামেই তালিকা তৈরী করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানায়, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন অফিসার মো. হারুন আর রশিদ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রান্তিক কৃষকের বদলে ভুয়া তালিকা তৈরী করে কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদের মাধ্যমে অনুমোদন করান। কৃষি অফিসের সবথেকে বড় সিন্ডিকেট হারুন আর রশিদ। ঠিক একারও মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে এবং কৃষকদের উপস্থিতি ছাড়াই যে কারো হাতে তুলে দেয় প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকার কৃষিপণ্য, বিপরীতে গ্রহণ করেন লাখ লাখ টাকা উৎকোচ। যার ভাগ পান কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ সহ অনেকেই। সূত্রটি আরো জানান,‘ এবারের আমন মৌশুমে কৃষি প্রণোদনার ক্ষেত্রে কোনো মাষ্টার রোল কিংবা তালিকার যাচাই বাছাই হয়নি। কৃষকের উপস্থিতি ছাড়াই তাদের স্বাক্ষর ও টিপসই জাল করে, যাকে খুশি তাকেই অর্থের বিনিময়ে বিতরণ করেছেন কৃষিপণ্য। আর এসব কাজে হারুনকে সহায়তা করেন উপজেলার বিভিন্ন ইউপির বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য। তবে এ ঘটনায় কোনো ধরণের বক্তব্য পাওয়া যায়নি ওই ইউপি সদস্য মাসুদ আলমের।

তবে এ বিষয়ে বেতাগী কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন,‘ এমন ঘটনা সত্যিই দূঃজনক। এ ঘটনায় ঊর্ধতন কতৃর্পক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে এবং তদন্ত করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেতাগী সহকারী কমিশনা (ভূমি) বিপুল সিকদার বলেন, সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সরকারি কৃষিপণ্য বিতরণ না করে, দোকানে রেখে বিক্রির সত্যতা পাওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমান করা হয়েছে। পরবর্তিতে একই কার্যক্রম পরিচালনা করলে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করার বিষয়ে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ সরকারি সার দোকানে বিক্রির অভিযোগ আসছিলো,আজকে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়েও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।