ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ০৯:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • ৯ ভিউ

বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ। - [ছবি সংগৃহিত]

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব আমরা প্রতিনিয়ত অনুভব করছি। প্রতিবছরই যেন তাপমাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেও স্বরূপে বিদ্যমান। তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীদের নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ গরমে পানিশূন্যতা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রোগব্যাধিতে শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। মানবদেহের প্রায় ৭৫ শতাংশ পানি। এর মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ২.৫ শতাংশ পানি ঘাম ও প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষায় দৈনিক ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। তীব্র গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বিভিন্ন খনিজ লবণ এবং ৩ থেকে ৪ শতাংশ পানি বেরিয়ে যায় এবং শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। পানিশূন্যতার ফলে দুর্বলতা, মাথাব্যথা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, অচেতন হয়ে পড়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। একই সঙ্গে প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। দিনের একটা দীর্ঘ সময় স্কুল বা কলেজে থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পানি পানের ঘাটতি থাকে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তীব্র গরমের কারণে এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এ বন্ধ বেশিদিন রাখা যাবে না। একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। তখন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পানিশূন্যতা ও হিট স্ট্রোকের বিভিন্ন উপসর্গ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ফলে সব শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। পাশাপাশি পানিশূন্যতা ও হিট স্ট্রোকের কারণ, উপসর্গ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের অবহিত করবেন। গরমে দৈনিক ৩.৫ থেকে ৪ লিটার পানি পান ও বিভিন্ন রসালো ফল খাওয়ার উপকারিতা এবং খোলা, বাসি খাবার না খাওয়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেবেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে এবং তারা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যদেরও এই গরমে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবে।

তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের পানিশূন্যতা ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সন্তানের ব্যাগে বিশুদ্ধ পানির বোতল দিয়ে দিতে হবে, যেন কিছুক্ষণ পরপর তারা পানি পান করে দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের রোদে ছাতা ব্যবহার করা ও একটানা দীর্ঘ সময় রোদে না থাকার বিষয়ে অভিভাবকরা উৎসাহিত করবেন। রোদে ছাতা ব্যবহার সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদান করবে। সর্বোপরি, তীব্র দাবদাহ যেন আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ তথা স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অন্তরায় না হয়, সে বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ আমাদের সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

[ সহকারী শিক্ষক,বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ,বরগুনা ]

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

আপডেট টাইম ০৯:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব আমরা প্রতিনিয়ত অনুভব করছি। প্রতিবছরই যেন তাপমাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেও স্বরূপে বিদ্যমান। তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীদের নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ গরমে পানিশূন্যতা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রোগব্যাধিতে শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। মানবদেহের প্রায় ৭৫ শতাংশ পানি। এর মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ২.৫ শতাংশ পানি ঘাম ও প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষায় দৈনিক ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। তীব্র গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বিভিন্ন খনিজ লবণ এবং ৩ থেকে ৪ শতাংশ পানি বেরিয়ে যায় এবং শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। পানিশূন্যতার ফলে দুর্বলতা, মাথাব্যথা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, অচেতন হয়ে পড়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। একই সঙ্গে প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। দিনের একটা দীর্ঘ সময় স্কুল বা কলেজে থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পানি পানের ঘাটতি থাকে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তীব্র গরমের কারণে এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এ বন্ধ বেশিদিন রাখা যাবে না। একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। তখন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পানিশূন্যতা ও হিট স্ট্রোকের বিভিন্ন উপসর্গ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ফলে সব শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। পাশাপাশি পানিশূন্যতা ও হিট স্ট্রোকের কারণ, উপসর্গ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের অবহিত করবেন। গরমে দৈনিক ৩.৫ থেকে ৪ লিটার পানি পান ও বিভিন্ন রসালো ফল খাওয়ার উপকারিতা এবং খোলা, বাসি খাবার না খাওয়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেবেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে এবং তারা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যদেরও এই গরমে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবে।

তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের পানিশূন্যতা ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সন্তানের ব্যাগে বিশুদ্ধ পানির বোতল দিয়ে দিতে হবে, যেন কিছুক্ষণ পরপর তারা পানি পান করে দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের রোদে ছাতা ব্যবহার করা ও একটানা দীর্ঘ সময় রোদে না থাকার বিষয়ে অভিভাবকরা উৎসাহিত করবেন। রোদে ছাতা ব্যবহার সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদান করবে। সর্বোপরি, তীব্র দাবদাহ যেন আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ তথা স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অন্তরায় না হয়, সে বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ আমাদের সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

[ সহকারী শিক্ষক,বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ,বরগুনা ]