ডেস্ক নিউজ:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এবার দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন অনেক বর্তমান সংসদ-সদস্য। তাদের জায়গায় স্থান পেয়েছে নতুন মুখ। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ এবং দলের সাংগঠনিক রিপোর্ট বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া দেখে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অধিক জনপ্রিয়তা, দলে গ্রহণযোগ্যতা, দুর্দিনে মানুষের পাশে থাকা এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থীদের বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৈঠকে প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করলেও তা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি দলটি। রোববার সন্ধ্যায় ফের বৈঠকে বসছেন দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। সভা শেষে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতে পারে। ফলে এখন সবার দৃষ্টি কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন।
তালিকা প্রকাশের পরই পরিষ্কার হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কাদের কপালে জুটল দলীয় প্রতীক নৌকা। আর কোন কোন মন্ত্রী, সংসদ-সদস্যের কপাল পুড়ল। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর এবার শুরু হবে নির্বাচনি জোটের শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন বণ্টনের আনুষ্ঠানিক সমঝোতার প্রক্রিয়া। তবে জোটের আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে এবার খুবই সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট দলের সাংগঠনিক অবস্থা এবং প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি কোনো আসন ছাড়া হলে সেখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে কী ধরনের কৌশল নেওয়া হলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যাবে, তাও হিসাবে রাখা হচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ঘোষণার আগে রোববার সকাল ১০টায় দলের এবং সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে রোববারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন। একই সঙ্গে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিজয়ী করার প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিতে পারেন তিনি।
এর আগে সারা দেশের ৩০০ আসনের বিপরীতে ৩ হাজার ৩৬২টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। গড়ে প্রতিটি আসনে ১১ জনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী ক্ষমতাসীন দলে। এর মধ্যে দলের নেতা-মন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র ও ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় তারকাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। তাদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করতে বৃহস্পতিবার দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সভা বসে। প্রথম দিনের সভায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করে দলটি। শুক্রবার দ্বিতীয় দিন খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং তৃতীয় এবং শেষ দিনে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চতুর্থ দিনের বৈঠকে পুরোপুরি চূড়ান্ত হবে দলের প্রার্থী।
জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের জোটের পরিধি বাড়তে পারে এবং সেক্ষেত্রে দলীয় বা জোটের মনোনয়নও ভিন্নতর হবে। বিএনপি এলে জোট-মহাজোট গঠন করে শক্তিশালী প্রার্থীদের রেখে দুর্বল প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা হবে। আর শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা নির্বাচনে না এলে বিগত নির্বাচনগুলোর মতো জোট-মহাজোটের পথে না গিয়ে সবাইকে এককভাবে নির্বাচনে নামাতে চায় আওয়ামী লীগ। এতে যেমন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, তেমনই জনপ্রিয় নেতারাই নিজ নিজ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন।
দলীয় সূত্র বলছে, বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্নসহ এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি শারীরিকভাবে অসুস্থ ও প্রবীণ বেশকিছু সংসদ-সদস্যকে। তাদের স্থানে জায়গা পেয়েছেন ক্লিন ইমেজ, জনগণের কাছে জনপ্রিয় এবং এলাকায় পরিচিত নতুন প্রার্থীরা। যদিও কারা বাদ পড়ছেন, তা নিয়ে অবশ্য কেউ মুখ খোলেননি। কারণ হিসাবে দলটির নেতারা বলছেন, বাদ দেওয়ার পরও অনেক সময় তাকেই প্রার্থী করা হয়, আবার ঘোষিত প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার নজির আওয়ামী লীগের আছে। এ কারণে এবার কঠোর গোপনীয়তা রাখা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নতুন ও পুরোনো মিলিয়েই আমরা এবার মনোনয়ন দিচ্ছি। যেখানে পুরোনোরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে নতুন করে আমাদের ভাবতে হবে। যাদের জনপ্রিয়তা আছে, তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, ৩০০ আসনেই দলের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও সবাই যে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন তা নয়। জোট-মহাজোটের হিসাবের অঙ্কে সমঝোতা হলে যেসব আসন শরিক ও মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া হবে, সেসব আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এ কারণেই চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে দলের প্রধান শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত নৌকা প্রতীক বরাদ্দের চিঠির সঙ্গে দলীয় মনোনীত সব প্রার্থীর কাছ থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের একটি করে চিঠিও নেওয়া হতে পারে। যাতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনো প্রার্থীই বিদ্রোহ করে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারেন।
জানা যায়, বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করেছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সবশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৯টি আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। এছাড়া ১৪ দলীয় জোট শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ৫, জাসদ (ইনু) ৩, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২, জাসদ (আম্বিয়া) ১ এবং তরিকত ফেডারেশনকে দুটি আসন দিয়েছিল। আসন ভাগাভাগিতে যুক্তফ্রন্ট পেয়েছিল ৩টি। তবে এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট ও শরিকদের আসন সমঝোতার বিষয়টি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।