বেতাগী(বরগুনা) প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরগুনার বেতাগীতে মুখমন্ডলে গুলিবিদ্ধ দিনমজুর স্বপন খন্দকারকে যুগান্তরের সামাজিক সংগঠন ‘স্বজনসমাবেশ’ বেতাগী উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে, একই সাথে আহত স্বপনের পরিবারের সকল সদস্যদের মাঝে চালসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন বেতাগী উপজেলা প্রশাসন। সোমবার সন্ধ্যায় আহত স্বপনের গ্রামের বাড়িতে এসকল সহায়তা পৌঁছে দেন বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ, যুগান্তরের বেতাগী উপজেলা প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম ইরান, স্বজনসমাবেশের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নাঈম হাওলাদার। এসময়ে উপস্থিত স্থানীয়রা আহত স্বপনের পরিবারের দারিদ্র্যতার কথা উপজেলা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও ঊর্ধতন কতৃর্পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
আহত স্বপনের বাবা সাহেবআলী খন্দকার আবেগ আপ্লুত হয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন,‘ হয়তো গুল্লি খাইয়াও পোলাডা বাইচ্চা আছে, তবে মুখে গুলি লাগায় জিহ্বায় মারত্মক ক্ষত হয়েছে। টাকা পয়সা নাই, চিকিৎসা না করাইতে পারলে হয়তো পোলাডায় আর কোনোদিন কথা বলতে পারবে কিনা জানিনা। তিনি আরো বলেন, ঢাকার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে তারা কত সহায়তা পাচ্ছে, তবে কি আমার পোলাডা বেঁচে আছে বলেই কোনো সরকারি সহায়তা পাবেন না? এসময় তিনি ইউএনও‘র দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং সরকারের কাছে গুলিবিদ্ধ চিকিৎসাবঞ্চিত ছেলে স্বপনের চিকিৎসার আবেদন জানান।’
স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজুল হাসান বলেন,‘ স্বপন একম সাদামাটা প্রকৃতির, পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস্য হিসেবে ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন। ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হবার পর চিকিৎসাখরচ চালাতে গিয়ে পরিবারটি এখন নিঃশ্বপ্রায়। তিনবেলা খাবার মতোও সামর্থ্য নেই স্বপনের পরিবারের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে সকলের পরিবারই কোনো না কোনো ভাবে সহায়তা পেয়েছে, কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ব্যতিত কেউ খোঁজ নেয়নি পরিবারটির। স্বপনের চিকিৎসা সহায়তার জন্য প্রশাসনের নজর দেয়ার দাবী তোলেন ওই স্থানীয় বাসিন্দা।
গুলিবিদ্ধ স্বপনের পরিবারের দূর্বস্থার কথা শুনে বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ পরিবারটিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ^াস দিয়ে বলেন,‘ আপাতত চিকিৎসার জন্য আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করবো, এবং আন্দোলনে আহতদের জন্য সরকারি চিকিৎসাসেবা চালু হলে সকল ধরণের সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারেও নিশ্চয়তা দেন ওই কর্মকর্তা।
ফ্লাশব্যাক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগের দিন ৪ আগষ্ট বিকাল ৩টায় মিরপুর ১০ এর চত্ত্বরে গুলিবিদ্দ হন বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা সাহেব আলী খন্দকারের ছেলে স্বপন খন্দকার। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন। আহত স্বপনের ভাষ্যমতে পুলিশের বন্দুক থেকে ছোরা গুলি স্বপনের গালের একপাশ থেকে লেগে অপরপ্রান্ত থেকে বের হয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলের লোকজনের সহায়তায় তাকে মিরপুরের আজামত হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের পরও প্রানে বােঁচন স্বপন, তবে জিহ্বা ও কন্ঠনালীর পর্দায় মারাত্মক জখম হয়। ফলে সেই থেকে প্রায় বাকরুদ্ধ তিনি। পরে আজামত হাসপাতাল থেকে তাকে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল ও ঢাকা ডেন্টাল হসপিটালে চিকিৎসাশেষে অর্থাভাবে বর্তমানে বাড়িতে প্রায় বাক প্রতিবন্ধিকতার সন্নিকটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ দিনমজুর স্বপন খন্দকার।