ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেতাগীতে কোন ‘অজানা রোগে’ আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ১১:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
  • ৯ ভিউ

কোনো কারন ছাড়া অসুস্থ হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী।


প্রথমে দেখলে যে কারো মনে হবে এ যেনো এক অসুস্থতার প্রতিযোগীতা। অসুস্থ কেউ, অন্য কাউকে স্পর্শ করলেই তিনিও হচ্ছেন অসুস্থ। তবে কি কারনে অসুস্থ হচ্ছেন তা এখনো সবার কাছেই অজ্ঞাত এক আতঙ্ক। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বুধবার সকালে ওই বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা একের পর এক অসুস্থ হতে শুরু করে। এ ঘটনায় অসুস্থ শিক্ষার্থীরা অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন হাসপাতালে, বাকিদের অভিভাবকদের মাধ্যমে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠান বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। গত দুইদিন যাবৎ ওই বিদ্যালয়ে ঘটছে এমন বিস্ময়কর কান্ড।


খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, একে একে প্রায় ২৫জন শিক্ষার্থী মুহুর্তেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ কান্না করছে, কেউ আবার চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে পালাচ্ছে, আবার কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে শ্রেণিকক্ষের মেঝেতেই লুটিয়ে পড়েছে। একজন অন্য জনকে স্পর্শ করলেই দ্বিগুণ মাত্রায় বাড়ছে অসুস্থতা। বাস্তবে দেখলে যে কেউ মনে করবে কোনো আধ্যাত্মিক শক্তির প্রভাবে হচ্ছে সবকিছু। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন— সপ্তম শ্রেণির (হাবিবা,মরিয়ম,সুমাইয়া) অষ্টম শ্রেণির(কুলসুম,চাঁদনী) নবম শ্রেণির (শামিমা,জান্নাতি,আরিফা) ও দশম শ্রেণির (মীম,হাফিজা,নাবিলা)।

এদের মধ্যে কয়েকজন দুপুরের দিকে কিছুটা সুস্থ হলে, তারা কিভাবে অসুস্থ হলো জানতে চাইলে বলেন,‘ আমরা হঠাৎ কেরে নিজেকেই নিজে চিনতে পারছিলাম না, মনে হচ্ছিলো কেউ আমাদের তাঁড়া করছে। অন্যদিকে দম বন্ধ হয়ে আসতে ছিলো। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়েছি এমন খবর পেয়ে আমাদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসলে দু‘একজন ব্যতিত অনেকেই আমরা তাদের চিনতে মাত্র পারিনি। এছাড়া তাদের তেমন কিছু মনে নেই বলে জানান। তবে অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীরা সকলেই সপ্তম থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী, এর মধ্যে একজনও ছাত্র অসুস্থ হয়নি। ফলে বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা ঘটনাটিকে রহস্যময় বলেই আখ্যা দিচ্ছেন।

বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষও এ ঘটনার কোনো সঠিক কারন খুঁজে পাননি। তবে ঘটনার সাথে পরিকল্পিতভাবে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে, এমনটাই জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নান্না মিয়া। তিনি আরো জানান,‘ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণিকক্ষ এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি এমন ঘটনা ঘটতেই পারে, এসময় শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বুঝিয়ে শান্ত রাখাটাই উত্তম।’

এদিকে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সুস্থ শিক্ষার্থীরা দিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা। তারা বলছেন বিদ্যালয়ে আকস্মিকভাবে কোনো অলৌকিক শক্তির প্রভাব পড়েছে। যার ফলে অসুস্থতার পরপরই কেউ কেউ উলটাপালটা কথাবার্তাও বলছেন। আবার কেউ বলছেন ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্থান, নন্দিনী কর্ণারের কক্ষে প্রবেশের পর থেকেই ওই শিক্ষার্থীদের এমন অস্বাভাবিক আচরণ ও শারিরিক অস্বস্তি শুরু হয়। এরপরই শুরু হয় ছোটাছুটি, একে একে অসুস্থ হন অন্তত ২৫জন শিক্ষার্থী।


তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলছে জানতে কথা হয়, বরিশাল শের—ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (মেডিসিন বিভাগের) ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা: রবিন্দ্রনাথ সরকারের সাথে তিনি বলেন,‘এমন অজ্ঞাত কারনে অসুস্থতার ঘটনা অনেক সময় ঘটে, তবে এটি কোনো ধরণের অলৌকিক বিষয় নয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞাণে এ সমস্যার একটি সুন্দর ব্যাখ্যা আছে। এটির বাংলা অক্ষরিক নাম গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা বা (ম্যাস হিস্টিরিয়া)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই (কিশোর— কিশোরী) বয়সের মধ্যে এমন প্রভাব বেশি দেখা যায়, আবার এ সমস্যা অন্য যে কারোও হতে পারে। এমন সময়ে সবচেয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওই সকল কিশোর—কিশোরীদের কাউন্সেলিং বা মনোবিকলন করা। তদেরকে এটা বুঝাতে হবে তারা যা দেখছে বা ভাবছে, সেটি সম্পূর্ণ অবাস্তব একটি বিষয়।’

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

বেতাগীতে কোন ‘অজানা রোগে’ আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

আপডেট টাইম ১১:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪


প্রথমে দেখলে যে কারো মনে হবে এ যেনো এক অসুস্থতার প্রতিযোগীতা। অসুস্থ কেউ, অন্য কাউকে স্পর্শ করলেই তিনিও হচ্ছেন অসুস্থ। তবে কি কারনে অসুস্থ হচ্ছেন তা এখনো সবার কাছেই অজ্ঞাত এক আতঙ্ক। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বুধবার সকালে ওই বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা একের পর এক অসুস্থ হতে শুরু করে। এ ঘটনায় অসুস্থ শিক্ষার্থীরা অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন হাসপাতালে, বাকিদের অভিভাবকদের মাধ্যমে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠান বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। গত দুইদিন যাবৎ ওই বিদ্যালয়ে ঘটছে এমন বিস্ময়কর কান্ড।


খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, একে একে প্রায় ২৫জন শিক্ষার্থী মুহুর্তেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ কান্না করছে, কেউ আবার চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে পালাচ্ছে, আবার কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে শ্রেণিকক্ষের মেঝেতেই লুটিয়ে পড়েছে। একজন অন্য জনকে স্পর্শ করলেই দ্বিগুণ মাত্রায় বাড়ছে অসুস্থতা। বাস্তবে দেখলে যে কেউ মনে করবে কোনো আধ্যাত্মিক শক্তির প্রভাবে হচ্ছে সবকিছু। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন— সপ্তম শ্রেণির (হাবিবা,মরিয়ম,সুমাইয়া) অষ্টম শ্রেণির(কুলসুম,চাঁদনী) নবম শ্রেণির (শামিমা,জান্নাতি,আরিফা) ও দশম শ্রেণির (মীম,হাফিজা,নাবিলা)।

এদের মধ্যে কয়েকজন দুপুরের দিকে কিছুটা সুস্থ হলে, তারা কিভাবে অসুস্থ হলো জানতে চাইলে বলেন,‘ আমরা হঠাৎ কেরে নিজেকেই নিজে চিনতে পারছিলাম না, মনে হচ্ছিলো কেউ আমাদের তাঁড়া করছে। অন্যদিকে দম বন্ধ হয়ে আসতে ছিলো। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়েছি এমন খবর পেয়ে আমাদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসলে দু‘একজন ব্যতিত অনেকেই আমরা তাদের চিনতে মাত্র পারিনি। এছাড়া তাদের তেমন কিছু মনে নেই বলে জানান। তবে অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীরা সকলেই সপ্তম থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী, এর মধ্যে একজনও ছাত্র অসুস্থ হয়নি। ফলে বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা ঘটনাটিকে রহস্যময় বলেই আখ্যা দিচ্ছেন।

বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষও এ ঘটনার কোনো সঠিক কারন খুঁজে পাননি। তবে ঘটনার সাথে পরিকল্পিতভাবে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে, এমনটাই জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নান্না মিয়া। তিনি আরো জানান,‘ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণিকক্ষ এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি এমন ঘটনা ঘটতেই পারে, এসময় শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বুঝিয়ে শান্ত রাখাটাই উত্তম।’

এদিকে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সুস্থ শিক্ষার্থীরা দিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা। তারা বলছেন বিদ্যালয়ে আকস্মিকভাবে কোনো অলৌকিক শক্তির প্রভাব পড়েছে। যার ফলে অসুস্থতার পরপরই কেউ কেউ উলটাপালটা কথাবার্তাও বলছেন। আবার কেউ বলছেন ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্থান, নন্দিনী কর্ণারের কক্ষে প্রবেশের পর থেকেই ওই শিক্ষার্থীদের এমন অস্বাভাবিক আচরণ ও শারিরিক অস্বস্তি শুরু হয়। এরপরই শুরু হয় ছোটাছুটি, একে একে অসুস্থ হন অন্তত ২৫জন শিক্ষার্থী।


তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলছে জানতে কথা হয়, বরিশাল শের—ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (মেডিসিন বিভাগের) ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা: রবিন্দ্রনাথ সরকারের সাথে তিনি বলেন,‘এমন অজ্ঞাত কারনে অসুস্থতার ঘটনা অনেক সময় ঘটে, তবে এটি কোনো ধরণের অলৌকিক বিষয় নয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞাণে এ সমস্যার একটি সুন্দর ব্যাখ্যা আছে। এটির বাংলা অক্ষরিক নাম গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা বা (ম্যাস হিস্টিরিয়া)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই (কিশোর— কিশোরী) বয়সের মধ্যে এমন প্রভাব বেশি দেখা যায়, আবার এ সমস্যা অন্য যে কারোও হতে পারে। এমন সময়ে সবচেয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওই সকল কিশোর—কিশোরীদের কাউন্সেলিং বা মনোবিকলন করা। তদেরকে এটা বুঝাতে হবে তারা যা দেখছে বা ভাবছে, সেটি সম্পূর্ণ অবাস্তব একটি বিষয়।’