বেতাগীতে মানববন্ধন ও থানায় অভিযোগ
বেতাগী(বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার বেতাগীতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে পেটানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে ধীরগতিতে পড়া দেয়ায় বেতের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান সুজন। বেত্রাঘাতে মারধরের ফলে অজ্ঞান হয়ে পরলে ওই শিক্ষার্থীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইদিন যাবৎ চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের বরখাস্তের দাবীতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। একইসাথে সংশ্লিষ্ট থানা ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবার শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে লিখিত অভিযোগ করেছেন মারধরের শিকার শিক্ষার্থী ইমা আক্তারের বাবা ইলিয়াস হাওলাদার। তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান সুজন। এদিকে তদন্ত করে সঠিক ববস্থা গ্রহণের কথা বলছেন স্থানীয় প্রশাসন।
জানা যায়, উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ১৯ নং বাসন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমা আক্তার। গত রবিবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত পড়া জিজ্ঞেস করেন শিক্ষার্থী ইমাকে। প্রশ্ন ছিলো ‘মুক্তিযুদ্ধ কি?। কিন্তু শিক্ষার্থী ইমা আগের দিন বিদ্যালয়ে অনপুস্থিত থাকার কারনে জানতেন না নির্ধারিত পড়া। তাই ধীরগতিতে পড়া দিতে শুরু করেন ওই শিক্ষার্থী ইমা ফলে ক্ষীপ্ত হয়ে শিক্ষক সুজন বেতের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে বেধড়ক পেটান শিক্ষার্থী ইমাকে। মারধরের একপর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল নামের এক পল্লী চিকিৎসক দিয়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থী বাসায় এসে বমি করলে তার মা বমির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী সব ঘটনা খুলে বলে। পরে সন্ধ্যায় তাকে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি করেন। চিকিৎসক ডা: লিখন বলেন, শিক্ষার্থীর শরিরের অভ্যন্তরীণ অংশের একাধিক স্থানে পেটানোর চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ইমার বাবা ইলিয়াস হাওলাদার বেতাগী থানায় ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনার পরের দিন বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানীয় ‘পুলের হাট’ বাজারে ওই বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষব্ধ হয়ে ঘন্ট্যাব্যাপী মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান সুজনের বরখাস্তের দাবী জানান।
শিক্ষার্থীর মা শিরিনা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে একটু ভীতু স্বভাবের। এর ওপর বেতের লাঠির এলোপাতাড়ি আঘাতের যন্ত্রনায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পরেন। তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ের শরিরের যেসকল অংশে সুজন স্যার পিটিয়েছেন তা অন্যের কাছে বলার মতো নয়। প্রত্যেকটা আঘাতে চিহ্ন কালো হয়ে আছে শরিরে। তিনি আজ নতুন নয়, এমন প্রায় সময়ই অনেক শিক্ষার্থীকে একটু এদিক ওদিক হলেই পশুর মতো পেটায়। আমি অভিভাবক হিসেবে এর বিচার চাই।
ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কবির ফরাজী এবং স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মনিরুজ্জমান জামাল বলেন,‘ শিক্ষক সুজন যখন ক্লাশে থাকেন তখন কোনো শিক্ষার্থী ওয়াশরুমে গেলেও বেতের লাঠি দিয়ে বেধরক পেটান, তার অনিয়ম দুর্নীতির শেষ নেই। তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। আমারা স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
তবে এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাসন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান সুজন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী ইমাকে বেধরক পেটানো হয়নি। শুধু পড়া না পারায় শিক্ষক হিসেবে শাসন করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ জটিলতা থাকার কারনে স্থানীয় একটি চক্র বিষয়টিকে নানাভাবে রহস্যময় করে তুলেছেন।
বেতাগী থানার ওসি বলেন,‘ ওই শিক্ষককে ডাকা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শণ করেছেন। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার ভূমি বিপুল সিকদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তশেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা(সহকারী) মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সরকারি প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বেত্রঘাতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।