ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেতাগীতে বিয়ে ছাড়াই তিন মাস সংসার: বিষপানে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪
  • ৯ ভিউ

বেতাগী(বরগুনা)প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে শর্তনুযায়ী বিয়ে ছাড়াই তিনমাস সংসার করার পর মোসা. মরিয়ম আক্তার নামের এক স্কুলছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। ওই শিক্ষার্থী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের বাসিন্দা কাইয়ুম হাওলাদারের মেয়ে ও বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী। সোমবার বেলা ১১ টায় স্কুল ছাত্রীর নিজ বাড়িতেই ঘটনাটি ঘটে। তবে আত্মত্যার দুইদিন পার হলেও জানতেন না স্কুলের কোনো সহপাঠী কিংবা স্থানীয় থানা পুলিশ। ফলে আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়, তবে পরিবারের প্রাথমিক ভাষ্য খালাতো ভাইকে বিয়ে করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন মরিয়ম। যদিও এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে একদমই নারাজ দুই পরিবার। প্রশাসন বলছেন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে উন্মোচন হয় আত্মহত্যার মর্মান্তিক রহস্য।

স্থানীয়রা জানান, দুই বছর পূর্বে মরিয়মের খালাতো ভাই একই এলাকার লক্ষিপুরা গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহজানের ছেলে ইমরান হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেয়ে ও তার পরিবার বিয়ের কথা বললে ইমরানের পরিবার শর্ত জুরে দেন মরিয়মের পরিবারকে, যেহেতু মরিয়ম প্রাপ্ত বয়স্ক না তাই বিয়ের আগে তিন মাস সংসার করতে হবে ছেলের সাথে। বিষয়টি সামাজিকভাবে একদমই বেমানান সত্যেও আপন খালার সংসারে থাকবে বলে রাজি হন মরিয়মের পরিবার। পরে গত জানুয়ারি মাসে খালার বাড়িতে বিয়ে ছাড়াই সাংসারিক জীবনে পা রাখে দশম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম। শর্তনুযায়ী সাংসারিক সময় তিনমাস পার হলে বিয়ের কথা বলেন মরিয়ম ও তার পরিবার, কিন্তু কোনো ভাবেই বিয়েতে রাজি হয়নি খালাতো ভাই ইমরান ও তার পরিবার। একপর্যায়ে খালার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় মরিয়মকে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি সৃষ্টি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, বিয়ে ছাড়া তিন মাস ইমরানের বাড়িতে সংসার করায় মরিয়মকে প্রায় সময়ই আশেপাশের লোকজনের নোংরা কথা শুনতে হতো। সামাজিকভাবে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে যায় মেয়েটি, ফলে লোক—লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে বাধ্য হয়েই বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। তারা আরো বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আমরা জানতে পারি মরিয়ম খুবই  অসুস্থ তাকে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরিশাল শের—ই বাংলা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে বরিশাল থেকে মৃতবস্থায় নিয়ে আসলে তাড়াহুড়ো করেই মরিয়মের লাশ দাফন সম্পন্ন করেন পরিবার। তখন পরিবার জানায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন মরিয়ম এবং ময়নাতদন্ত হওয়ায় দাফনে বিলম্ব করেননি তারা। একাধিক সহপাঠী বলেন, আমরাও জানতাম মরিয়মের খালাতো ভাইয়ের সাথেই বিয়ে হবে ওর। তাই খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে আগে থেকেই খালার বাড়িতে থাকতেন। মরিয়মের আত্মহত্যার জন্য দায়ী খালাতো ভাই ইমরান ও তার পরিবারের শাস্তির দাবী জানান সহপাঠীরা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মনির সিকদার বলেন,‘ বিষয়টি একদমই সত্য যে খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে বিয়ে আগ থেকেই থাকতো মরিয়ম। পরে ছেলের পরিবার বিয়েতে রাজি না হলে এ ঘটনায় একাধিকবার সালিশি বৈঠকও হয়েছে, যেহেতু তারা দুই পরিবারই রক্তের আত্মীয় তাই আমরা স্থানীয়রাও সালিশিতে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ফলে সামাজিক লজ্জা থেকে এড়াতেই মেয়েটি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি দুই পরিবারের কেউ। বেতাগী থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন,‘ এ বিষয়ে আমরা আদৌ অবগত না, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

বেতাগীতে বিয়ে ছাড়াই তিন মাস সংসার: বিষপানে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

আপডেট টাইম ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪

বেতাগী(বরগুনা)প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে শর্তনুযায়ী বিয়ে ছাড়াই তিনমাস সংসার করার পর মোসা. মরিয়ম আক্তার নামের এক স্কুলছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। ওই শিক্ষার্থী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের বাসিন্দা কাইয়ুম হাওলাদারের মেয়ে ও বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী। সোমবার বেলা ১১ টায় স্কুল ছাত্রীর নিজ বাড়িতেই ঘটনাটি ঘটে। তবে আত্মত্যার দুইদিন পার হলেও জানতেন না স্কুলের কোনো সহপাঠী কিংবা স্থানীয় থানা পুলিশ। ফলে আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়, তবে পরিবারের প্রাথমিক ভাষ্য খালাতো ভাইকে বিয়ে করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন মরিয়ম। যদিও এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে একদমই নারাজ দুই পরিবার। প্রশাসন বলছেন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে উন্মোচন হয় আত্মহত্যার মর্মান্তিক রহস্য।

স্থানীয়রা জানান, দুই বছর পূর্বে মরিয়মের খালাতো ভাই একই এলাকার লক্ষিপুরা গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহজানের ছেলে ইমরান হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেয়ে ও তার পরিবার বিয়ের কথা বললে ইমরানের পরিবার শর্ত জুরে দেন মরিয়মের পরিবারকে, যেহেতু মরিয়ম প্রাপ্ত বয়স্ক না তাই বিয়ের আগে তিন মাস সংসার করতে হবে ছেলের সাথে। বিষয়টি সামাজিকভাবে একদমই বেমানান সত্যেও আপন খালার সংসারে থাকবে বলে রাজি হন মরিয়মের পরিবার। পরে গত জানুয়ারি মাসে খালার বাড়িতে বিয়ে ছাড়াই সাংসারিক জীবনে পা রাখে দশম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম। শর্তনুযায়ী সাংসারিক সময় তিনমাস পার হলে বিয়ের কথা বলেন মরিয়ম ও তার পরিবার, কিন্তু কোনো ভাবেই বিয়েতে রাজি হয়নি খালাতো ভাই ইমরান ও তার পরিবার। একপর্যায়ে খালার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় মরিয়মকে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি সৃষ্টি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, বিয়ে ছাড়া তিন মাস ইমরানের বাড়িতে সংসার করায় মরিয়মকে প্রায় সময়ই আশেপাশের লোকজনের নোংরা কথা শুনতে হতো। সামাজিকভাবে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে যায় মেয়েটি, ফলে লোক—লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে বাধ্য হয়েই বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। তারা আরো বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আমরা জানতে পারি মরিয়ম খুবই  অসুস্থ তাকে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরিশাল শের—ই বাংলা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে বরিশাল থেকে মৃতবস্থায় নিয়ে আসলে তাড়াহুড়ো করেই মরিয়মের লাশ দাফন সম্পন্ন করেন পরিবার। তখন পরিবার জানায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন মরিয়ম এবং ময়নাতদন্ত হওয়ায় দাফনে বিলম্ব করেননি তারা। একাধিক সহপাঠী বলেন, আমরাও জানতাম মরিয়মের খালাতো ভাইয়ের সাথেই বিয়ে হবে ওর। তাই খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে আগে থেকেই খালার বাড়িতে থাকতেন। মরিয়মের আত্মহত্যার জন্য দায়ী খালাতো ভাই ইমরান ও তার পরিবারের শাস্তির দাবী জানান সহপাঠীরা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মনির সিকদার বলেন,‘ বিষয়টি একদমই সত্য যে খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে বিয়ে আগ থেকেই থাকতো মরিয়ম। পরে ছেলের পরিবার বিয়েতে রাজি না হলে এ ঘটনায় একাধিকবার সালিশি বৈঠকও হয়েছে, যেহেতু তারা দুই পরিবারই রক্তের আত্মীয় তাই আমরা স্থানীয়রাও সালিশিতে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ফলে সামাজিক লজ্জা থেকে এড়াতেই মেয়েটি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি দুই পরিবারের কেউ। বেতাগী থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন,‘ এ বিষয়ে আমরা আদৌ অবগত না, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’