লিপিকা মন্ডল অর্পিতাঃ
আগামীকাল শুক্রবার (২০ অক্টোবর) মহাষষ্ঠীতে মন্ডপে মন্ডপে ঢাক কাঁশর ঘন্টা উলুধ্বনি আর পুরোহিতের চন্ডী পাঠ দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। প্রকৃতিতে কাশফুলের পরশে মানুষকে যেন প্রাণচাঞ্চল্য করে তুলছে শরৎ আকাশ। সনাতনীদের বৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসবে মেতে উঠবে পূজা মন্ডপ। মন্ডপগুলোতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। উৎসবের আমেজ বইছে।
গত শনিবার ( ১৪ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের দূর্গা পূজার আনুষ্ঠনিকতা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দিনপঞ্জিকানুসারে, এবছর দূর্গাদেবী ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী তিথিতে মর্ত্যে গোটকে (ঘোড়া) আসছে আর ২৪ অক্টোবর দশমী তিথিতে কৈলাশে চলে যাবেন গোটকে। আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহা অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৪ অক্টোবর দশমী তিথি প্রতীমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় শারদীয় উৎসব দূর্গা পূজা। মহামারি করোনার সংকট কেটে যাওয়ায় এ বছর বরগুনার বেতাগী উপজেলায় ২ টি পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ টি ।
পাড়া-মহল্লায় প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। শিল্পীরা নিপুণ হাতে কাঠ, বাঁশ, বন ও মাটি দিয়ে তৈরি করছেন দেবী দুর্গার প্রতিমা। প্রতিটি মণ্ডপের জন্য তৈরি হচ্ছে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক। মহিষাসুর, মা দূর্গার বাহন সিংহ, লক্ষ্মীদেবির বাহন পেঁচা, সরস্বতী দেবির বাহন রাজহাঁস, গণেশে বাহন ইঁদুর ও কার্তিকের বাহন ময়ুরসহ বিভিন্ন প্রতিমা। ধর্ম যার যার উৎসব সবার এ বিশ্বাসে সব মিলিয়ে এবারের পূজাতেও কোনো কমতি থাকবে না বলে জানান আয়োজক । এদিকে পূজামণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো ধরনের কার্যক্রম হলে সংশ্লিষ্ট কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের। আবার পূজা উদযাপন পরিষদ থেকেও মন্দিরগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ উপজেলায় প্রতিমা তৈরির মৃৎ শিল্পীরা গত দুইদিন পূর্বেই রং তুলি করার কাজ সম্পন্ন করেছে। মন্ডপগুলোতে সকল ধরণের সাজ সজ্জার কাজ সম্পন্ন করেছে। উপজেলার বেতাগী কেন্দ্রীয় সর্বজনীন কালী মন্দিরের দুর্গামন্ডপের সভাপতি তপন কর্মকার বলেন,’ ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরি ও মন্ডপের সকল ধরণের সাজসজ্জা সম্পন্ন করা হয়েছে।’
বেতাগী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ধীমান কান্তি গুহ বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার সকল পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরার স্থাপন করা হয়েছে এবং আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনার পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিসহ মনোনয়নকৃত ভলান্টিয়ারদের সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তায় মোতায়েনকৃত পুলিশসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা প্রদান করতে হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে এ বিষয়ে তিনি সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
বেতাগী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, ধর্মীয় এ উৎসবকে ঘিরে মন্ডপগুলো প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছে মৃৎশিল্পীরা এবং স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর ২ টি পূজা মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। ‘
বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন,’ ইতোমধ্যে আইন শৃংখলায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি পূজামন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েঝে। পূজামণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো ধরনের কার্যক্রম হলে সংশ্লিষ্ট কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।’