ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শাশুড়িকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে লাপাত্তা পুত্রবধূ

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৫ ভিউ

শাশুড়িকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ওই এলাকা থেকে পালিয়েছেন পূর্ণিমা জ্যোতি নামের এক পুত্রবধূ। সাথে নিয়ে গেছেন স্বামীকেও। ঘটনাটি বরগুনার বেতাগী পৌরশহর এলাকার। গত সোমবার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে পুত্রবধূর হাতে অবর্ননীয় শারিরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ষাটোর্ধ এক শাশুড়ি। লোহার পাইপ দিয়ে হাত—পা, মুখমন্ডলসহ শরিরের বিভিন্ন অংশে পিটিয়ে জখমের পর বাসা থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই পুত্রবধূর বিরুদ্ধে।


পরে ওই ঘটনার কিছু ভিডিও এঘটনায় নিযার্তনের শিকার আহত শাশুড়ী রিতা রানীর(৬০) শারিরিক জখমের কিছু ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে যা নেটিজেনদের নেতিবাচক মন্তব্যে মুহুর্তেই ভাইরাল হয়। পরে এ ঘটনায় গতকাল নিযার্তনের শিকার রিতা রানীর ছোট ছেলে শোভন বসু বাদী হয়ে বড় ভাই(শুভ বসু) ও তার স্ত্রী(পুত্রবধূ) জ্যোতি মৃধা সহ চারজনকে আসামী করে বেতাগী থানায় মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে বরিশাল শের—ই—বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে (শেবাচিম) চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই ভুক্তভোগী শাশুড়ী। এদিকে মামলার পরপরই এলাকা থেকে লাপাত্তা বৃদ্ধার বড় ছেলে শুভ ও পুত্রবধূ জ্যোতি। তবে পুলিশ বলছেন আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।


ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী রিতা রানী বসু নিজেই নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন জ্যোতির বিরুদ্ধে। তার শরিরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাতের রক্ত জমাট বাধা চিহ্ন। প্রতিবেশিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রায় সময়েই পুত্রবধূ জ্যোতি তার শাশুড়ীকে কথায় কথা গায় হাত তুলতো। বৃদ্ধ মানুষ সহয সরল তাই এমন আঘাত সহ্য করেও কাউকে কিছ বলতেন না ছেলের সংসারে অশান্তি হবে ভেবে। প্রতিবেশি সোনালী রানী বলেন, বেশ কয়েকবার ছেলে শুভ বসুর সামনেও জ্যোতি তার শাশুড়ীকে চর থাপ্পর মেরেছেন। তাও ছেলে এর কোনো প্রতিবাদ করতেন না। এমনকি দু‘বছর হয় রিতা রানীর স¦ামী মারা গিয়েছেন, তাকেও মারধর করতে জ্যোতি(পুত্রবধূ)।


নিযার্তনের শিকার রিতা রানী এক ভিডিও স্বাক্ষাতকারে ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে বলেন,‘ বাসায় কাজের লোক থাকার পরও ছেলের বউ সকল কাজই আমায় দিয়ে করায়। কথায় কথায় মারধর গাইল(গালাগাল) করে। তাও মুখ বুঝে থাকি কারন সংসারে কাউর (অশান্তি) চাই না। সেদিন ডাল রান্না করছিলাম জ্যোতি(পুত্রবধূ) মুখে নিয়ে বলে উঠে ডাল পুড়লো ক্যামনে(কিভাবে), আমি কিছু বলার আগে চোখে—মুখে ঘুষি, শরিরে লাথি মারতে থাকে পরে স্টিলের পাইপ নিয়ে আমায় ইচ্ছেমতো পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। বাধ্য হয়ে ভাইয়ের বাসায় গিয়েও মুখ বুঝে ছিলাম। একদিকে যেমন কষ্ট আবার লজ্জ্বাও কিভাবে মানুষের কাছে বলবো আমার পেটের সন্তানের সামনে তার স্ত্রী আমাকে গরুর মতো পিটায়। এসব বলতে বলতে নির্বাক হয়ে যায় নির্যাতনের শিকার রিতা রানী।


নিযার্তনের শিকার রিতা রানীর(৬০) ছোট ছেলে শোভন বসু বলেন,‘ আমার মাকে মেরে বাসার স্বর্ণ অলংকারসহ সম্পত্তি আত্মসাতের জন্যই এমন অমানবিক নিযার্তন করে আসছিলেন বড় ভাই শুভ ও তার স্ত্রী জ্যোতি, কিন্তু কখনো মা বলতেন না। প্রায় সময় শরিরে আঘাতের চিহ্ন দেখলে বলতেন পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছেন। ঘটনার দিন সকাল ৮ থেকে সন্ধা পর্যন্ত তাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমি শুনতে পেয়ে মাকে মামার বাসা থেকে উদ্ধার করে বরিশালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। চিকিৎসক জানিয়েছেন পা ও চোখের অবস্থা গুরতর। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।


বেতাগী থানার (ওসি) মো.মাহবুবুর রহমান বলেন,‘ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে অবগত হয়েছি, বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। নিযার্তনের শিকার বৃদ্ধার ছোট ছেলে বাদী হয়ে মামলা করেছেন, ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

শাশুড়িকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে লাপাত্তা পুত্রবধূ

আপডেট টাইম ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শাশুড়িকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ওই এলাকা থেকে পালিয়েছেন পূর্ণিমা জ্যোতি নামের এক পুত্রবধূ। সাথে নিয়ে গেছেন স্বামীকেও। ঘটনাটি বরগুনার বেতাগী পৌরশহর এলাকার। গত সোমবার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে পুত্রবধূর হাতে অবর্ননীয় শারিরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ষাটোর্ধ এক শাশুড়ি। লোহার পাইপ দিয়ে হাত—পা, মুখমন্ডলসহ শরিরের বিভিন্ন অংশে পিটিয়ে জখমের পর বাসা থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই পুত্রবধূর বিরুদ্ধে।


পরে ওই ঘটনার কিছু ভিডিও এঘটনায় নিযার্তনের শিকার আহত শাশুড়ী রিতা রানীর(৬০) শারিরিক জখমের কিছু ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে যা নেটিজেনদের নেতিবাচক মন্তব্যে মুহুর্তেই ভাইরাল হয়। পরে এ ঘটনায় গতকাল নিযার্তনের শিকার রিতা রানীর ছোট ছেলে শোভন বসু বাদী হয়ে বড় ভাই(শুভ বসু) ও তার স্ত্রী(পুত্রবধূ) জ্যোতি মৃধা সহ চারজনকে আসামী করে বেতাগী থানায় মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে বরিশাল শের—ই—বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে (শেবাচিম) চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই ভুক্তভোগী শাশুড়ী। এদিকে মামলার পরপরই এলাকা থেকে লাপাত্তা বৃদ্ধার বড় ছেলে শুভ ও পুত্রবধূ জ্যোতি। তবে পুলিশ বলছেন আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।


ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী রিতা রানী বসু নিজেই নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন জ্যোতির বিরুদ্ধে। তার শরিরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাতের রক্ত জমাট বাধা চিহ্ন। প্রতিবেশিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রায় সময়েই পুত্রবধূ জ্যোতি তার শাশুড়ীকে কথায় কথা গায় হাত তুলতো। বৃদ্ধ মানুষ সহয সরল তাই এমন আঘাত সহ্য করেও কাউকে কিছ বলতেন না ছেলের সংসারে অশান্তি হবে ভেবে। প্রতিবেশি সোনালী রানী বলেন, বেশ কয়েকবার ছেলে শুভ বসুর সামনেও জ্যোতি তার শাশুড়ীকে চর থাপ্পর মেরেছেন। তাও ছেলে এর কোনো প্রতিবাদ করতেন না। এমনকি দু‘বছর হয় রিতা রানীর স¦ামী মারা গিয়েছেন, তাকেও মারধর করতে জ্যোতি(পুত্রবধূ)।


নিযার্তনের শিকার রিতা রানী এক ভিডিও স্বাক্ষাতকারে ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে বলেন,‘ বাসায় কাজের লোক থাকার পরও ছেলের বউ সকল কাজই আমায় দিয়ে করায়। কথায় কথায় মারধর গাইল(গালাগাল) করে। তাও মুখ বুঝে থাকি কারন সংসারে কাউর (অশান্তি) চাই না। সেদিন ডাল রান্না করছিলাম জ্যোতি(পুত্রবধূ) মুখে নিয়ে বলে উঠে ডাল পুড়লো ক্যামনে(কিভাবে), আমি কিছু বলার আগে চোখে—মুখে ঘুষি, শরিরে লাথি মারতে থাকে পরে স্টিলের পাইপ নিয়ে আমায় ইচ্ছেমতো পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। বাধ্য হয়ে ভাইয়ের বাসায় গিয়েও মুখ বুঝে ছিলাম। একদিকে যেমন কষ্ট আবার লজ্জ্বাও কিভাবে মানুষের কাছে বলবো আমার পেটের সন্তানের সামনে তার স্ত্রী আমাকে গরুর মতো পিটায়। এসব বলতে বলতে নির্বাক হয়ে যায় নির্যাতনের শিকার রিতা রানী।


নিযার্তনের শিকার রিতা রানীর(৬০) ছোট ছেলে শোভন বসু বলেন,‘ আমার মাকে মেরে বাসার স্বর্ণ অলংকারসহ সম্পত্তি আত্মসাতের জন্যই এমন অমানবিক নিযার্তন করে আসছিলেন বড় ভাই শুভ ও তার স্ত্রী জ্যোতি, কিন্তু কখনো মা বলতেন না। প্রায় সময় শরিরে আঘাতের চিহ্ন দেখলে বলতেন পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছেন। ঘটনার দিন সকাল ৮ থেকে সন্ধা পর্যন্ত তাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমি শুনতে পেয়ে মাকে মামার বাসা থেকে উদ্ধার করে বরিশালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। চিকিৎসক জানিয়েছেন পা ও চোখের অবস্থা গুরতর। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।


বেতাগী থানার (ওসি) মো.মাহবুবুর রহমান বলেন,‘ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে অবগত হয়েছি, বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। নিযার্তনের শিকার বৃদ্ধার ছোট ছেলে বাদী হয়ে মামলা করেছেন, ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।