ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে না পেরে বারবার পরিক্ষা স্থগিত

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১৩ ভিউ


বরগুনার বেতাগীতে পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থীদের নিয়োগ পরিক্ষা নিয়ে তৈরী হয়েছে এক তুঘলকি কান্ড। প্রধান শিক্ষকের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে না পারায় বারবার পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, একই সাথে লাখ লাখ টাকা ঘুস বানিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক বলছেন বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা(ইউএনও) নিয়োগ পরিক্ষায় আসতে না পারায় পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে ইউএনও বলছেন তার পাঠানো প্রশ্নে পরিক্ষা নিবেন না প্রধান শিক্ষক, তাই তিনি পরিক্ষা স্থগিত করেছেন। তাছাড়া তিনি ওই নিয়োগ কমিটির কোনো সদস্য নয়, তাই তার উপস্থিত হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ওই বিদ্যালয়ের তিনটি পদের নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জানা যায়,উপজেলার পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, আয়া ও অফিস সহায়ক তিনটি শুন্য পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য নিয়োগবিধি অনুসারে গত ৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। পরে নিয়োগ পক্রিয়া বাস্তবায়নে ৫ সদস্যের নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ থাকলেও প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত হয়। পরবর্তী ২৮ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। পরিক্ষা কেন্দ্রে ওই তিনটি পদে প্রায় ২৮ জন চাকরি প্রত্যাশী পরিক্ষা দিতে আসলে পূণরায় ওই পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান সহকারি প্রধান শিক্ষক, আয়া ও অফিস সহায়ক পদে বিভিন্ন প্রর্থীর কাছ থেকে মোট অংকের টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। এমনকি এক পদের বিপরীতে ২—৩ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। ফলে নিয়োগ প্রদানে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, আয়া পদে রীনা রানী’র কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান ও বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) আল আমিন এ যাবৎ সাড়ে সাত লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে দীপংকর চক্রবর্তী’র কাছ থেকে ৫ লাখ টাকায় নিয়োগ দেয়ার চুক্তি হয়, যেখানে তিন লাখ টাকা অগ্রিম নেয়া হয়। একইসাথে অফিস সহায়ক পদেও একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগ প্রদানের কথা বলেলাখ লাখ টাকার ঘুস বানিজ্য করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, তিনটি পদে চাকররি জন্য একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক তাই বারবার পরিক্ষা স্থগিত করছেন, কেননা কাকে রেখে কাকে চাকরি দিয়ে তোপের মুখে পরবেন প্রধান শিক্ষক!
একাধিক চাকরিপ্রত্যাশী পরিক্ষার্থী জানান,‘ আমরা অনেক দূর থেকে পরিক্ষা দিতে এসে বারবার ফিরে যাচ্ছি, আমাদের চাকরির নামে পরিক্ষার নাটক সাজিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
এবিষয় পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান বলেন,’ টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য নয়। এছাড়া ইউএনও স্যার আসবেন না তাই তাকে সম্মান দিয়েই পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন গাজী কোনো কথা বলতে না চাইলেও , উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন অর্থ উৎকোচের অভিযোগ ওঠার কারনেই পরিক্ষা স্থগিত কার হয়েছে।
বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,‘ আমি ওই নিয়োগ কমিটির কেউ না, আমাকে বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ রেজুলেশন করে পরিক্ষার প্রশ্ন তৈরী করার জন্য অনুরোধ করলে আমি প্রশ্ন তৈরী করে আমার প্রতিনিধি এসিল্যান্ডকে দিয়ে পাঠাই। তবে তারা সেই প্রশ্নে পরিক্ষা নিবেন না বললে আমার প্রতিনিধি চলে আসেন। নিয়োগ প্রদানে ঘুস বানিজ্যে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে না পেরে বারবার পরিক্ষা স্থগিত

আপডেট টাইম ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩


বরগুনার বেতাগীতে পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থীদের নিয়োগ পরিক্ষা নিয়ে তৈরী হয়েছে এক তুঘলকি কান্ড। প্রধান শিক্ষকের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে না পারায় বারবার পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, একই সাথে লাখ লাখ টাকা ঘুস বানিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক বলছেন বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা(ইউএনও) নিয়োগ পরিক্ষায় আসতে না পারায় পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে ইউএনও বলছেন তার পাঠানো প্রশ্নে পরিক্ষা নিবেন না প্রধান শিক্ষক, তাই তিনি পরিক্ষা স্থগিত করেছেন। তাছাড়া তিনি ওই নিয়োগ কমিটির কোনো সদস্য নয়, তাই তার উপস্থিত হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ওই বিদ্যালয়ের তিনটি পদের নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জানা যায়,উপজেলার পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, আয়া ও অফিস সহায়ক তিনটি শুন্য পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য নিয়োগবিধি অনুসারে গত ৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। পরে নিয়োগ পক্রিয়া বাস্তবায়নে ৫ সদস্যের নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ থাকলেও প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত হয়। পরবর্তী ২৮ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। পরিক্ষা কেন্দ্রে ওই তিনটি পদে প্রায় ২৮ জন চাকরি প্রত্যাশী পরিক্ষা দিতে আসলে পূণরায় ওই পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান সহকারি প্রধান শিক্ষক, আয়া ও অফিস সহায়ক পদে বিভিন্ন প্রর্থীর কাছ থেকে মোট অংকের টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। এমনকি এক পদের বিপরীতে ২—৩ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। ফলে নিয়োগ প্রদানে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, আয়া পদে রীনা রানী’র কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান ও বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) আল আমিন এ যাবৎ সাড়ে সাত লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে দীপংকর চক্রবর্তী’র কাছ থেকে ৫ লাখ টাকায় নিয়োগ দেয়ার চুক্তি হয়, যেখানে তিন লাখ টাকা অগ্রিম নেয়া হয়। একইসাথে অফিস সহায়ক পদেও একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগ প্রদানের কথা বলেলাখ লাখ টাকার ঘুস বানিজ্য করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, তিনটি পদে চাকররি জন্য একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক তাই বারবার পরিক্ষা স্থগিত করছেন, কেননা কাকে রেখে কাকে চাকরি দিয়ে তোপের মুখে পরবেন প্রধান শিক্ষক!
একাধিক চাকরিপ্রত্যাশী পরিক্ষার্থী জানান,‘ আমরা অনেক দূর থেকে পরিক্ষা দিতে এসে বারবার ফিরে যাচ্ছি, আমাদের চাকরির নামে পরিক্ষার নাটক সাজিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
এবিষয় পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান বলেন,’ টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য নয়। এছাড়া ইউএনও স্যার আসবেন না তাই তাকে সম্মান দিয়েই পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন গাজী কোনো কথা বলতে না চাইলেও , উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন অর্থ উৎকোচের অভিযোগ ওঠার কারনেই পরিক্ষা স্থগিত কার হয়েছে।
বেতাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,‘ আমি ওই নিয়োগ কমিটির কেউ না, আমাকে বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ রেজুলেশন করে পরিক্ষার প্রশ্ন তৈরী করার জন্য অনুরোধ করলে আমি প্রশ্ন তৈরী করে আমার প্রতিনিধি এসিল্যান্ডকে দিয়ে পাঠাই। তবে তারা সেই প্রশ্নে পরিক্ষা নিবেন না বললে আমার প্রতিনিধি চলে আসেন। নিয়োগ প্রদানে ঘুস বানিজ্যে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।