ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্যের বাড়িতে মায়ের কাজ করা বন্ধ করতে ঢাকায় এসেছিলেন নাঈম

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ১১:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪
  • ৮ ভিউ

ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নাঈম (২১) নামে বরগুনার একজন নিহত হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া রেস্টুরেন্ট কাচ্চি ভাইতে তিনি নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন। নাঈম সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের মো. নানটু হাওলাদারের ছেলে।

নাঈম ২০২১ সালে উপজেলার গৌরীচন্না নওয়াব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং গত বছর বরগুনা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

স্বজনরা জানান, অসচ্ছল পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে এক মাস আগে ঢাকায় পাড়ি জমান নাঈম। প্রথমে একটি রেষ্টুরেন্টে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ নেন তিনি। এরপর কর্মস্থল পরিবর্তন করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ নেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার দায়িত্ব পালনের সময় রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। পরে রাত ১০টার দিকে আগুনের ঘটনা ঘটে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে বাড়িতে ফোন করে তার বাবাকে জানান নাঈম। এর কিছুক্ষণ পরপরই তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকালে তার মারা যাওয়ার খবর পান স্বজনরা।

নাঈমের চাচা মো. মিরাজ দফাদার বলেন, নাঈম দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার মা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন এবং তার বাবা শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যখন যে কাজ পান সেই কাজই করেন। বাবা-মায়ের এমন করুণ অবস্থায় নাঈম নিজে সংসারের হাল ধরতে চান। এজন্য তিনি ঢাকায় গিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব নেন। এখন তাকে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। চোখের সামনেই একটি পরিবার একেবারে পথে বসে গেল।

নাঈমের ফুফু মাহফুজা বেগম বলেন, অভাবের কারণে নাঈমের মা লাকি বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এটা নাঈম ভালোভাবে নিতে পারেননি। তাই অন্যের বাড়িতে মায়ের কাজ করা বন্ধ করতে চাকরি করতে ঢাকা যান নাঈম। তরতাজা ছেলেটা এখন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। 

তিনি বলেন, নাঈমের ওপর ভরসা করে অনেক টাকা ঋণ করে সম্প্রতি নতুন ঘর তুলেছেন নাঈমের বাবা। ঋণের জালে জর্জরিত এই পরিবারটি একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একমাত্র ছেলেও এখন না ফেরার দেশে।

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

অন্যের বাড়িতে মায়ের কাজ করা বন্ধ করতে ঢাকায় এসেছিলেন নাঈম

আপডেট টাইম ১১:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪

ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নাঈম (২১) নামে বরগুনার একজন নিহত হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া রেস্টুরেন্ট কাচ্চি ভাইতে তিনি নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন। নাঈম সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের মো. নানটু হাওলাদারের ছেলে।

নাঈম ২০২১ সালে উপজেলার গৌরীচন্না নওয়াব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং গত বছর বরগুনা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

স্বজনরা জানান, অসচ্ছল পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে এক মাস আগে ঢাকায় পাড়ি জমান নাঈম। প্রথমে একটি রেষ্টুরেন্টে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ নেন তিনি। এরপর কর্মস্থল পরিবর্তন করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ নেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার দায়িত্ব পালনের সময় রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। পরে রাত ১০টার দিকে আগুনের ঘটনা ঘটে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে বাড়িতে ফোন করে তার বাবাকে জানান নাঈম। এর কিছুক্ষণ পরপরই তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকালে তার মারা যাওয়ার খবর পান স্বজনরা।

নাঈমের চাচা মো. মিরাজ দফাদার বলেন, নাঈম দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার মা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন এবং তার বাবা শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যখন যে কাজ পান সেই কাজই করেন। বাবা-মায়ের এমন করুণ অবস্থায় নাঈম নিজে সংসারের হাল ধরতে চান। এজন্য তিনি ঢাকায় গিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব নেন। এখন তাকে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। চোখের সামনেই একটি পরিবার একেবারে পথে বসে গেল।

নাঈমের ফুফু মাহফুজা বেগম বলেন, অভাবের কারণে নাঈমের মা লাকি বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এটা নাঈম ভালোভাবে নিতে পারেননি। তাই অন্যের বাড়িতে মায়ের কাজ করা বন্ধ করতে চাকরি করতে ঢাকা যান নাঈম। তরতাজা ছেলেটা এখন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। 

তিনি বলেন, নাঈমের ওপর ভরসা করে অনেক টাকা ঋণ করে সম্প্রতি নতুন ঘর তুলেছেন নাঈমের বাবা। ঋণের জালে জর্জরিত এই পরিবারটি একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একমাত্র ছেলেও এখন না ফেরার দেশে।