সৈয়দা জুয়েলী আক্তার মনিকা
‘পরিবেশ শিক্ষা’ যে বিষয়টির গুরুত্ব সচেতনতার একটি মূল অংশ। পরিবেশ সংরক্ষণ হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক জগৎকে সংরক্ষণ ও রক্ষা করার অনুশীলন। এর সঙ্গে জীবন্ত প্রাণী, বাস্তুতন্ত্র (ইকো সিস্টেম) এবং প্রাকৃতিক সম্পদসহ আমাদের পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সুরক্ষার প্রশ্ন জড়িত। পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্য হলো-দূষণ হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশগত ভারসাম্য পুনরুদ্ধার, বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস করা ইত্যাদি।
অন্যদিকে, পরিবেশ সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-বন সংরক্ষণ, মাটি সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জনসচেতনতা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে জেমস অডুবনের উক্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় : ‘একজন সত্যিকারের সংরক্ষণবাদী এমন এক ব্যক্তি, যিনি জানেন পৃথিবী তার পিতার দ্বারা দেওয়া হয়নি, কিন্তু তার সন্তানদের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে।’
শিক্ষা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্নভাবে শিক্ষা ও জনসচেতনতা পৃথিবী নামক আমাদের এ গ্রহটিকে সুরক্ষিত রাখতে অবদান রাখে। জীববৈচিত্র্যের টেকসই ও ন্যায়সংগত ব্যবহারের জন্য শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষকে জীববৈচিত্র্য এবং তা সংরক্ষণের মূল্য বুঝতে সাহায্য করে। পরিবেশগত শিক্ষা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
মানুষ যখন বিভিন্ন ইকো সিস্টেম সংরক্ষণের গুরুত্ব বোঝে, তখন তাদের রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শিক্ষা জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত নৃগোষ্ঠী এবং স্থানীয় জ্ঞান সংরক্ষণে সহায়তা করে, যা টেকসই ভূমি ব্যবহার এবং ইকো সিস্টেম পরিষেবার জন্য অপরিহার্য।
শিক্ষা পরিবেশগত সচেতনতা তৈরিতে একটি শক্তিশালী অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। শিক্ষামূলক পাঠক্রমে সংরক্ষণের নীতিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তরুণদের মানস ও আচরণ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। দেশে টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ শিক্ষাকে জাতীয় পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীদের পরিবেশগত সমস্যা এবং টেকসই অনুশীলন সম্পর্কে শিক্ষিত করতে সাহায্য করবে।
গণমাধ্যম (সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি) পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, আইন ও নীতি সম্পর্কে জনগণের জ্ঞান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষিত করার জন্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রচারাভিযান, কর্মশালা ও মিডিয়ার মাধ্যমে এনজিওগুলো মানুষকে পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং কীভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিবেশকে প্রভাবিত করে, তা বুঝতে সাহায্য করে। জ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে রক্ষা করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
[ সহকারী শিক্ষক,বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ,বেতাগী ]