ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেতাগীতে ত্রাণের নামে লাখ ডলার আত্মসাত

  • প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
  • ১৮ ভিউ

বেতাগী প্রতিনিধি:

বরগুনার বেতাগীতে তুরস্কের (সেফকাতএলি সংস্থা কতৃর্ক) পাঠানো এক লাখ ডলার মূল্যের ঈদ সামগ্রি বিতরণের নামে ওই সংস্থার কথিত পরিচালক রেজাউল করিম ইলিয়াস মৃৃধা বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এনজিও ব্যুরো‘র অনুমতি কিংবা প্রত্যয়ন ছাড়াই সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করেছেন তিনি। বেতাগীতে সামান্য কিছু লোকের মাঝে খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করে বাকি অর্থ লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। নিয়মনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়কে অবহিত করার বিধান থাকলেও তা কর্ণপাত করেননি ওই কথিত পরিচালক। তবে ইলিয়াস মৃধার দাবী সকল সরকারি বৈধতা মেনেই ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে প্রমান স্বাপেক্ষে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন উপজেলা প্রশাসন।

জানা যায়,‘ পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে গত (৯ এপ্রিল) উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আ. আজিজ এর ছেলে রেজাউল করিম ইলিয়াস মৃৃধা ১ হাজার পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রি বিতরণ করার ঘোষনা করেন। একইসাথে তিনি ঘোষনা করে তুরস্ক ভিত্তিক দাতা সংস্থা সেফকাতএলি‘র তিনি বাংলাদেশের পরিচালক। সারা দেশে তারই নেতৃত্বে ঈদ উপলক্ষে একলাখ ডলার অর্থের(বাংলাদেশী টাকায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা) খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করা হচ্ছে। তবে বেতাগী তিনি এক হাজারের নামে মাত্র ৩০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রি বিতরণ করেন। পরে এ নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা সমালোচনা।

খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিয়মানুসারে কোনো বৈদেশিক দাতা সংস্থার সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এনজিও ব্যুরোর অনুমতি দরকার হয় এবং ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব দিয়ে সহযোগিতার অর্থ উত্তোলন করতে হয়। এছাড়াও যে এলাকায় ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হবে ওই এলাকার ইউএনও এবং সমাজসেবা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন নিতে হয়। সংশি্স্নষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসকল অনুমতি কিংবা প্রত্যয়ন ছাড়াই ওই কথিত পরিচালক ইলিয়াস মৃধা নামেমাত্র ত্রান বিতরণ করে বাকি টাকা আত্মসাত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে সূত্রটি আরো জানায়, তুরস্কে থাকা বাংলাদেশী নাগরিক মো. মাহিব হাওলাদারের মাধ্যমে হুন্ডির মাধ্যমে (ইলিয়াসের আত্মীয়) ৬০ হাজার ডলালের বাংলাদেশী টাকা আত্মসাত করেন। এবং বাকি ৪০ হাজার ডলার এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এছাড়াও ওই দাতা সংস্থা থেকে যে পরিমান অর্থ পাঠানো হয়েছে তা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার জন্য। তিনি রোহিঙ্গাদের না দিয়ে নিজ এলাকায় নামেমাত্র বিতরণ করে বাকি অর্থ আত্মসাত করেছেন। এর আগেও ইলিয়াস মৃধা অতীশদিপঙ্কর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,লালমাটিয়ার মহিলা কলেজ ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি থেকে জাল সার্টিফিকেট বিক্রির দায়ে চাকরীচ্যুত হয়।

এ বিষয় জানতে কথা হয় রেজাউল করিম ইলিয়াস মৃৃধার সাথে তিনি জানান,‘ আমার আগে এই সংস্থার আওতায় যারা কাজ করতেন তারা আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এ কুৎসা রটাচ্ছেন। আমার কাছে সকল বৈধ কাগজপত্রাদি আছে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, সারা দেশে এক লাখ ডলার অর্থের খাদ্য সামগ্রী তিনি বিতরণ করেছেন। তবে ওই সংস্থার সাথে তার সম্পর্ক কি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বলেন তিনি কোনো পরিচালক না, শুধুমাত্র ওই সংস্থার লোকদের অনুরোধ করে কিছু খাদ্যসমাগ্রী এনেছেন ও বিতরণ করেছেন। ওই সংস্থার এনজিও ব্যুরোর কোন বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এবিষয় উপজেলা এনজিও ফোরাম সমন্বয়কের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন,‘ এনজিও ব্যুরো থেকে কোন বৈধ কাগজপত্র থাকলে আমাদেরকে অবহিত করতো। এ সংস্থা কোন বেধ কাগজপত্র দাখিল করে নাই।’
বেতাগী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুমবিল্লাহ বলেন,’ এই সংস্থার কোন বৈধ কাগজপত্র বা তথ্য সমাজসেবা অফিসে জমা দেয়নি এবং এধরণের কোন অনুমতি নেয়নি।
এবিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,’ গরিব অসহায় মানুষদের মধ্যে যদি কেউ বৈধভাবে খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করে থাকে সেটা ভালো কাজ। তবে অবৈধভাবে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে কোন কাজ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রনাম সাপেক্ষে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে

ট্যাগ

মন্তব করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল

বেতাগীতে ত্রাণের নামে লাখ ডলার আত্মসাত

আপডেট টাইম ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

বেতাগী প্রতিনিধি:

বরগুনার বেতাগীতে তুরস্কের (সেফকাতএলি সংস্থা কতৃর্ক) পাঠানো এক লাখ ডলার মূল্যের ঈদ সামগ্রি বিতরণের নামে ওই সংস্থার কথিত পরিচালক রেজাউল করিম ইলিয়াস মৃৃধা বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এনজিও ব্যুরো‘র অনুমতি কিংবা প্রত্যয়ন ছাড়াই সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করেছেন তিনি। বেতাগীতে সামান্য কিছু লোকের মাঝে খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করে বাকি অর্থ লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। নিয়মনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়কে অবহিত করার বিধান থাকলেও তা কর্ণপাত করেননি ওই কথিত পরিচালক। তবে ইলিয়াস মৃধার দাবী সকল সরকারি বৈধতা মেনেই ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে প্রমান স্বাপেক্ষে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন উপজেলা প্রশাসন।

জানা যায়,‘ পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে গত (৯ এপ্রিল) উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আ. আজিজ এর ছেলে রেজাউল করিম ইলিয়াস মৃৃধা ১ হাজার পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রি বিতরণ করার ঘোষনা করেন। একইসাথে তিনি ঘোষনা করে তুরস্ক ভিত্তিক দাতা সংস্থা সেফকাতএলি‘র তিনি বাংলাদেশের পরিচালক। সারা দেশে তারই নেতৃত্বে ঈদ উপলক্ষে একলাখ ডলার অর্থের(বাংলাদেশী টাকায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা) খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করা হচ্ছে। তবে বেতাগী তিনি এক হাজারের নামে মাত্র ৩০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রি বিতরণ করেন। পরে এ নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা সমালোচনা।

খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিয়মানুসারে কোনো বৈদেশিক দাতা সংস্থার সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এনজিও ব্যুরোর অনুমতি দরকার হয় এবং ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব দিয়ে সহযোগিতার অর্থ উত্তোলন করতে হয়। এছাড়াও যে এলাকায় ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হবে ওই এলাকার ইউএনও এবং সমাজসেবা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন নিতে হয়। সংশি্স্নষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসকল অনুমতি কিংবা প্রত্যয়ন ছাড়াই ওই কথিত পরিচালক ইলিয়াস মৃধা নামেমাত্র ত্রান বিতরণ করে বাকি টাকা আত্মসাত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে সূত্রটি আরো জানায়, তুরস্কে থাকা বাংলাদেশী নাগরিক মো. মাহিব হাওলাদারের মাধ্যমে হুন্ডির মাধ্যমে (ইলিয়াসের আত্মীয়) ৬০ হাজার ডলালের বাংলাদেশী টাকা আত্মসাত করেন। এবং বাকি ৪০ হাজার ডলার এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এছাড়াও ওই দাতা সংস্থা থেকে যে পরিমান অর্থ পাঠানো হয়েছে তা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার জন্য। তিনি রোহিঙ্গাদের না দিয়ে নিজ এলাকায় নামেমাত্র বিতরণ করে বাকি অর্থ আত্মসাত করেছেন। এর আগেও ইলিয়াস মৃধা অতীশদিপঙ্কর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,লালমাটিয়ার মহিলা কলেজ ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি থেকে জাল সার্টিফিকেট বিক্রির দায়ে চাকরীচ্যুত হয়।

এ বিষয় জানতে কথা হয় রেজাউল করিম ইলিয়াস মৃৃধার সাথে তিনি জানান,‘ আমার আগে এই সংস্থার আওতায় যারা কাজ করতেন তারা আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এ কুৎসা রটাচ্ছেন। আমার কাছে সকল বৈধ কাগজপত্রাদি আছে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, সারা দেশে এক লাখ ডলার অর্থের খাদ্য সামগ্রী তিনি বিতরণ করেছেন। তবে ওই সংস্থার সাথে তার সম্পর্ক কি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বলেন তিনি কোনো পরিচালক না, শুধুমাত্র ওই সংস্থার লোকদের অনুরোধ করে কিছু খাদ্যসমাগ্রী এনেছেন ও বিতরণ করেছেন। ওই সংস্থার এনজিও ব্যুরোর কোন বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এবিষয় উপজেলা এনজিও ফোরাম সমন্বয়কের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন,‘ এনজিও ব্যুরো থেকে কোন বৈধ কাগজপত্র থাকলে আমাদেরকে অবহিত করতো। এ সংস্থা কোন বেধ কাগজপত্র দাখিল করে নাই।’
বেতাগী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুমবিল্লাহ বলেন,’ এই সংস্থার কোন বৈধ কাগজপত্র বা তথ্য সমাজসেবা অফিসে জমা দেয়নি এবং এধরণের কোন অনুমতি নেয়নি।
এবিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,’ গরিব অসহায় মানুষদের মধ্যে যদি কেউ বৈধভাবে খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করে থাকে সেটা ভালো কাজ। তবে অবৈধভাবে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে কোন কাজ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রনাম সাপেক্ষে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে